বিজ্ঞাপন
default-image

সিরাজউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিতে আক্রমণ চালান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে। আকস্মিক আক্রমণে হকচকিত পাকিস্তানি সেনারা। কিছুক্ষণ পর তাদের দিক থেকে শুরু হলো প্রতিরোধ। প্রচণ্ড যুদ্ধ চলতে থাকল। গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারাই বিজয়ী হলেন। এ ঘটনা ঘটেছিল জিনারদীতে ১৯৭১ সালের ১৩ আগস্ট।

জিনারদী নরসিংদী জেলার অন্তর্গত (ঘোড়াশালের সন্নিকটে)। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এখানে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। ১৩ আগস্ট দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা জিনারদীতে আক্রমণ করেন। আড়াই ঘণ্টা যুদ্ধের পর ১৫ জন পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সাতজন পালিয়ে যায়। একজন নিহত হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা জিনারদী রেলস্টেশন ধ্বংস করেন। তাঁরা ছিলেন মাত্র কয়েকজন। মূলত তাঁর কৌশলী ভূমিকার জন্যই পাকিস্তানি সেনারা সেদিন পরাভূত হয়।

মুক্তিবাহিনীর ২ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল) এক সাক্ষাত্কারে এ যুদ্ধের বিবরণ দিয়ে বলেছেন: ‘...আগস্ট মাসের ১৩ তারিখে আমাদের একটি গেরিলা দল পাকিস্তানি সেনাদের জিনারদী ক্যাম্প আক্রমণ করে। আড়াই ঘণ্টা যুদ্ধের পর একজন নিহত ও ১৫ জন আত্মসমর্পণ করে। সাতজন পালিয়ে যায়। গেরিলারা জিনারদী রেলস্টেশন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়। টেলিফোন যোগাযোগও তারা ধ্বংস করে। টিকিট ও অন্যান্য কাগজপত্র জ্বালিয়ে দেয়। ক্যাম্প থেকে আমাদের গেরিলারা একটি হালকা মেশিনগান, ১১টি রাইফেল, হালকা মেশিনগানের ৪৫০০ গুলি, একটি স্টেনগান ও ১০০ রাউন্ড গুলি, ১০টি বেল্ট, ২৬ জোড়া বুট, ১৭ ক্যান আটা, ১১ পেটি দুধ ও আরও জিনিসপত্র উদ্ধার করে।’ (বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, দলিলপত্র, দশম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫৩-১৫৪)।

১৯৭১ সালে সিরাজউদ্দীন আহমেদ চাকরি করতেন পাকিস্তানি নৌবাহিনীতে। তখন তাঁর পদবি ছিল লিডিং রাইটার। ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি ছুটিতে বাড়ি ছিলেন। ছুটি শেষ হলেও চাকরিতে আর যোগ দেননি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে যোগ দেন। নরসিংদীর পাঁচদোনার যুদ্ধে (৮-৯ এপ্রিল) তিনি অংশ নেন। এ যুদ্ধের পর তিনি স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। নরসিংদীর পতন হলে তিনি ছাত্র-যুবকদের সঙ্গে নিয়ে ভারতে যান। কয়েক দিন পর এলাকায় ফিরে স্থানীয় আরও কিছু ছাত্র-যুবককে সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাঠান। তাঁরা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসে তাঁর অধীনে গেরিলাযুদ্ধ করেন। নরসিংদী সদর থানা ও এর আশপাশের এলাকায় সংগঠিত আরও অনেক যুদ্ধে তিনি অংশ নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান