বিজ্ঞাপন
default-image

ফেনী জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পূর্ব অলকা। এই গ্রামে একটি পুকুরপাড়ে গাছপালার নিচে কয়েকটি কবর। একটু দূরে আরেকটি কবর। সেটি চিহ্নিত, কিন্তু তাতে বেশ অবহেলা ও অযত্নের ছাপ। এই কবরে যিনি শায়িত, তিনি খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। সিকান্দার আহমেদ বীর প্রতীকের কবর সেটি।

১৯৭১ সাল। নভেম্বরের শেষ দিক। চারদিকে মুক্তিবাহিনীর জোরালো আক্রমণ চলছে। পাকিস্তানি সেনারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তারা পিছু হটছে। মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত করছেন এলাকার পর এলাকা। ফেনী জেলার বিলোনিয়া মুক্ত করার পর মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বান্দুয়া-পাঠাননগর এলাকায়। তাঁদের সঙ্গে আছে মিত্রবাহিনী। ২২-২৩ নভেম্বর থেকে সেখানে চলছে যুদ্ধ।

দিনরাত গোলাগুলি। কখনো থেমে থেমে, কখনো টানা এক-দেড় ঘণ্টা। একটু পর পর গোলার কানফাটানো শব্দ। পাকিস্তানি সেনাদের গোলা এসে পড়ছে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের আশপাশে বা সামান্য দূরে। এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজন গোলার আঘাতে আহত হয়েছেন।

৫ ডিসেম্বরও যুদ্ধ চলছিল। এদিন সিকান্দার আহমেদ ও তাঁর সহযোদ্ধারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে সিকান্দার আহমেদের অবস্থান থেকে একটু দূরে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো পাকিস্তানি আর্টিলারি গোলা। গোলার টুকরা এসে আঘাত করল সিকান্দার আহমেদের শরীরে। গুরুতর আহত হলেন তিনি। রক্তে ভেসে গেল জায়গাটা। সহযোদ্ধারা চেষ্টা করলেন তাঁকে বাঁচাতে, কিন্তু পারলেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই সিকান্দার আহমেদ ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে। সেদিন আহত হন মুক্তিবাহিনীর আরও কয়েকজন। সিকান্দার আহমেদের বাড়ি ছিল বিলোনিয়া এলাকাতেই। সহযোদ্ধারা তাঁর লাশ বাড়িতে নিয়ে সমাহিত করেন। বাড়ির সামনের পুকুরপাড়েই তাঁর কবর।

সিকান্দার আহমেদ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানের লাহোরে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ছুটি নিয়ে বাড়ি আসেন। তিনি ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাব-সেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ করেন বিলোনিয়া, সালধর বাজার, মুন্সিরহাট, সুবার বাজারসহ আরও কয়েকটি জায়গায়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান