বিজ্ঞাপন
default-image

৪ নভেম্বর সকালে চাঁদপুরে মেঘনা নদীর পাশে ছদ্মবেশে রেকি করছিলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। অক্টোবরের শেষে তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা চাঁদপুর বন্দর এলাকায় কয়েকটি অপারেশন করেন। ফলে তখন জাহাজ চাঁদপুর বন্দরে না ভিড়ে দূরে বিভিন্ন স্থানে নোঙর করত। সেদিন সালাহউদ্দিন আহমেদ খবর পান এখলাসপুরের কাছে এমভি সামিসহ দুটি জাহাজ নোঙর করে আছে। খবর পেয়ে তিনি গোপন শিবিরে ফিরে যান। দুটি লিমপেট মাইন, একটি স্টেনগানসহ সহযোদ্ধা শাহজাহান কবির (বীর প্রতীক) ও সেলিমউল্লাহ খানকে নিয়ে একটি নৌকাযোগে এখলাসপুরে রওনা হন। গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন জাহাজ দুটি সেখানে ভেড়েনি। অদূরে জহিরাবাদ এলাকায় নোঙর করেছে।

তাঁরা এরপর মেঘনা নদীর তীরে থাকা একটি ছইযুক্ত পালতোলা বড় নৌকায় জোরপূর্বক উঠে পড়েন। মাঝিদের দিকে স্টেনগান তাক করে সাবধান করে দেন, তাঁরা যেন টুঁ শব্দ বা কোনো ছলচাতুরী না করে। তাঁদের নির্দেশে মাঝিরা জাহাজের দিকে রওনা দেয়।

নৌ-মুক্তিযোদ্ধারা কাছাকাছি গিয়ে দেখেন জাহাজের ডেকে তিন-চারজন পাকিস্তানি সেনা অস্ত্র হাতে পাহারায় নিযুক্ত। বাকিরা গল্পগুজব করছে। তখন আনুমানিক দুপুর একটা। দুঃসাহসী সালাহউদ্দিন আহমেদ আর দেরি না করে শাহজাহান কবিরকে নিয়ে নৌকার পেছন দিয়ে পানিতে নেমে পড়েন। তাঁদের বুকে গামছা দিয়ে বাঁধা লিমপেট মাইন। অপর সহযোদ্ধা সেলিম অস্ত্র হাতে তাঁদের নিরাপত্তার জন্য নৌকায় থাকেন।

সালাহউদ্দিন ও শাহজাহান প্রহরারত পাকিস্তানিদের সতর্ক চোখ ফাঁকি দিয়ে জাহাজের কাছে যান। সফলতার সঙ্গেই জাহাজের গায়ে মাইন লাগান। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাইন বিস্ফোরিত হয়। পাকিস্তানি সেনা, তাদের সহযোগী এবং নাবিক-লস্কররা ছোটাছুটি শুরু করে। জাহাজের সাইরেন বাজতে থাকে। মেঘনা নদীতে তখন অনেক জেলে মাছ ধরছিল। তাঁরা দ্রুত নৌকার পাল তুলে ভাটির দিকে পালিয়ে যায়। নৌকাশূন্য হয়ে পড়ে মেঘনা নদী। ক্ষতিগ্রস্ত এমভি সামি অতল পানির নিচে হারিয়ে যায়।

সালাহউদ্দিন আহমেদ চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে সেপাই হিসেবে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম সেক্টরের অধীন হালিশহরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাতে। কয়েকটি প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নিয়ে নিজ গ্রামে যান। এপ্রিল মাসের শেষে ভারতে যান। ভারতের হাতিমারা যুবক্যাম্পে তিনি কিছুদিন প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তাঁকে মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডো দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। উল্লেখযোগ্য অপারেশন জ্যাকপটসহ এমভি লোরেম, সোবহান, গফুর, লিলি আক্রমণ প্রভৃতি।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান