বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল হিলিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। হিলি দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার অন্তর্গত। মুক্তিযোদ্ধারা বেশির ভাগ ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা আর কিছু ইপিআর সদস্য। হিলির অদূরে ভারতীয় সীমান্তে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের হেডকোয়ার্টার। এপ্রিল ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক সময়। তখন মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন অসংগঠিত। সে জন্য তাঁদের আক্রমণগুলোও ছিল অসংগঠিত ও দুর্বল। এ ছাড়া তাঁদের ছিল না আধুনিক অস্ত্র ও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৩-১৪ এপ্রিল বগুড়া দখল করলে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন (বীর প্রতীক, পরে মেজর জেনারেল) একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে হিলিতে প্রতিরক্ষাব্যূহ গড়ে তোলেন। তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দুটি কোম্পানি অবস্থান নেয় চরখাই এলাকায়। ১৯ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাঁচবিবির দিক থেকে হিলিতে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ করেন। চার ঘণ্টাব্যাপী পাল্টাপাল্টি আক্রমণ ও যুদ্ধে বারুদের গন্ধে হিলির বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে।

এরপর চরখাইয়ে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাপ্টেন আনোয়ার হিলিতে এসে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন। চরখাইয়ে সহিদউল্লাহ ভূঁইয়া, সুবেদার হাফিজ ও নায়েব সুবেদার করম আলী নিজ নিজ দল নিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন। ক্যাপ্টেন আনোয়ারের নির্দেশে তাঁরা ২০ এপ্রিল সকালে হিলিতে সমবেত হন। সেদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আবার আক্রমণ করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ছয়জন শহীদ ও কয়েকজন আহত হন।

সহিদউল্লাহ ভূঁইয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। কর্মরত ছিলেন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। মার্চের শুরুতে সম্ভাব্য ভারতীয় আক্রমণের কথা বলে তাঁদের বেশির ভাগ সেনাকে সেনানিবাসের বাইরে সীমান্তবর্তী এলাকায় মোতায়েন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাঁর দল নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। কোনো এক যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। পরিবারের কাছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তরফ থেকে দেওয়া একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, তিনি ১২ আগস্ট দিনাজপুর জেলার মনোহরপুরে সংঘটিত এক যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান