বিজ্ঞাপন
default-image

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী ঘাঁটি অমরখানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। পেছনে হটে গিয়ে পাকিস্তানিরা অবস্থান নিয়েছে জগদলহাটে। পঞ্চগড় জেলার অন্তর্গত অমরখানা ও জগদলহাট। অমরখানা দখলের পর সকিম উদ্দিনসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা দ্রুত সমবেত হন জগদলহাটে। তিনি একটি উপদলের (প্লাটুন) দলনেতা।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে আর্টিলারির গোলাবর্ষণ শুরু করে। সকিম উদ্দিনসহ নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন সামনের ফ্রন্ট লাইনে। বেশুমার কামানের গোলা এসে পড়ে তাঁদের পেছনে ও আশপাশে। মাটি কাঁপিয়ে বিকট শব্দে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়। পোড়া বারুদের গন্ধ আর ধোঁয়ায় বাতাস ভারী হয়ে পড়ে।

প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ আক্রমণ। এরপর শুরু হয় স্থল আক্রমণ। সামনের প্রতিরক্ষা অবস্থানে সকিম উদ্দিন ও তাঁর সহযোদ্ধারা প্রস্তুতই ছিলেন। তাঁরা বিক্রমের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ মোকাবিলা করেন।

অগ্রবর্তী ঘাঁটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় পাকিস্তানিরা ছিল উন্মত্ত। বেপরোয়া হয়ে তারা আক্রমণ শুরু করে। প্রতিটা পাকিস্তানি সেনা ছিল সুইসাইড স্কোয়াডের মতো। ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের দিকে। সকিম উদ্দিন ও তাঁর সহযোদ্ধাদের বীরত্বে থেমে যায় পাকিস্তানিদের এগিয়ে আসার প্রচেষ্টা। তুমুল মুখোমুখি যুদ্ধের একপর্যায়ে অসীম সাহসী সকিম উদ্দিন ঝোড়োগতিতে গুলি করতে করতে এগিয়ে যান। জীবনের মায়া ত্যাগ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানিদের ওপর। এ সময় হঠাত্ গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তাঁর বুকসহ হাত-পায়ে গুলি লাগে। মাটিতে ঢলে পড়েন তিনি। নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ।

সেদিন যুদ্ধ চলাবস্থায় সকিম উদ্দিনের সহযোদ্ধারা চেষ্টা করেন তাঁর মরদেহ উদ্ধারের। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গোলাগুলির মুখে তাঁরা মরদেহ উদ্ধারে ব্যর্থ হন। কয়েকজন আহতও হন। পরে যৌথ বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানিরা পালিয়ে যায়। তখন মরদেহ উদ্ধার করে জগদলহাটেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

শহীদ সকিম উদ্দিনের সমাধি সংরক্ষিত। তবে স্বাধীনতার পর থেকে তা অযত্ন-অবহেলায় পড়ে ছিল। সম্প্রতি জেলা পরিষদের উদ্যোগে সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু নামফলকে তাঁর নামের পাশে বীর বিক্রম না লিখে বীর প্রতীক লেখা হয়েছে। পঞ্চগড় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভেও তাঁর নামের পাশে বীর প্রতীক লেখা রয়েছে।

সকিম উদ্দিন চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। মার্চ মাসে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাতে। ৬ নম্বর সেক্টরের ভজনপুর সাবসেক্টরের বিভিন্ন জায়গায় সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান