বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে টানা প্রায় এক মাস শেখ সোলায়মান ও তাঁর সহযোদ্ধারা যুদ্ধে ছিলেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে ক্রমাগত যুদ্ধ করেন। ঠিকমতো তাঁদের আহার-নিদ্রা হয়নি। জনবল ও অস্ত্রের রসদ কমে যায়। সেনাবাহিনীর অব্যাহত আক্রমণের মুখে তাঁরা পিছু হটেন, কিন্তু মনোবল হারাননি।

এরপর শেখ সোলায়মান ও তাঁর সহযোদ্ধারা পিছু হটে সমবেত হন সীমান্ত এলাকায়। চারদিকে পাহাড়। তাঁদের অবস্থান এক জঙ্গলের ভেতরে। ভোর হয় হয়। এ সময় তাঁদের অবস্থানে আক্রমণ চালায় পাকিস্তানি সেনারা। শান্ত এলাকা তীব্র গোলাগুলিতে হঠাত্ প্রকম্পিত হয়ে পড়ে। শত্রুর আক্রমণে শেখ সোলায়মান ও তাঁর সহযোদ্ধারা বিচলিত হননি। প্রত্যাশিত ছিল শত্রুর এ আক্রমণ। তাঁরা প্রস্তুতই ছিলেন। দ্রুত যে যেভাবে পারেন আক্রমণ মোকাবিলা শুরু করেন।

আক্রমণকারী পাকিস্তানি সেনারা ছিল বেপরোয়া ও অপ্রতিরোধ্য। জীবনের মায়া তাদের ছিল না। মরিয়া মনোভাব নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। শেখ সোলায়মান সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসের সঙ্গে আক্রমণ প্রতিরোধ করেন। কিন্তু বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেও পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা তাঁরা ঠেকাতে ব্যর্থ হন। কয়েক ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ হয়। এরপর তাঁরা পুনরায় পিছু হটতে বাধ্য হন। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিলের। বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত হেঁয়াকোয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিরোধযুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের পর সমবেত হন সীমান্তবর্তী রামগড়ে। তাঁদের একাংশ প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন হেঁয়াকোয়। মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলে ছিলেন শেখ সোলায়মান। তাঁরা ছিলেন কয়েকটি উপদলে বিভক্ত। একটি উপদলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।

রামগড় মুক্ত রাখতে সামরিক দিক থেকে হেঁয়াকো ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রামগড় দখলের জন্য পূর্ণ শক্তিতে অগ্রসর হয়। প্রথমে হেঁয়াকোয় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের তিন দিক থেকে আক্রমণ করে। ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে শেখ সোলায়মানসহ মুক্তিযোদ্ধারা বেশ নাজুক অবস্থায় পড়ে যান। কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধের পর তাঁরা পিছু হটে চিকনছড়ায় যান। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এক দিন পর সেখানেও আক্রমণ করে। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের চিকনছড়া থেকে পিছু হটে রামগড় যেতে হয়। ২ মে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের পর রামগড়ের পতন ঘটে।

শেখ সোলায়মান চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম সেক্টরের অধীনে। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাতে। কালুরঘাট, রাঙামাটি, হেঁয়াকো, চিকনছড়াসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। এরপর প্রথমে ১ নম্বর সেক্টরে এবং পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান