বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শেখ আবদুল মান্নান ছিলেন ঢাকার ফার্মগেট এলাকায়। কারফিউ শিথিল হলেও তিনি বাড়ি ফেরেননি। ২৮ মার্চ সেখান থেকে গোপীবাগে যান। সেখানে থাকতেন তাঁর বন্ধু মুনসুরুল আলম দুলাল (বীর প্রতীক)। তাঁরা দুজন সিদ্ধান্ত নেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করবেন। দুলালকে সঙ্গে নিয়ে সেদিনই ঢাকা ছাড়েন। রওনা হন ভারতের আগরতলার উদ্দেশে। সেখানে পৌঁছে তাঁরা খোঁজখবর নিতে থাকেন, কীভাবে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেওয়া যায়। এর মধ্যে তাঁর আরও কয়েকজন বন্ধু সেখানে যান। কিছুদিন পর তাঁদের দেখা হয় খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম) ও এ টি এম হায়দারের (বীর উত্তম) সঙ্গে। তাঁরা তাঁদের মুক্তিবাহিনীতে গেরিলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। শুরু হয় প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকায় ফেরেন। এই দলে তিনি ও দুলাল ছাড়াও ছিলেন বজলুল মাহমুদ (বীর প্রতীক), সিদ্দিক, আলমগীর, বাদল, আবদুল্লাহ, কটু ও খালেদ।

শেখ আবদুল মান্নান প্রথম অপারেশন করেন গ্রিন রোডে। জুন মাসের একদিন এক পাকিস্তানি সেনার ওপর আকস্মিকভাবে চড়াও হয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে তার এসএমজি কেড়ে নিয়ে তিনি পালিয়ে যান। ওই মাসেই তিনি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তেজগাঁও কলেজে হামলা করেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ তখন পরীক্ষার আয়োজন করেছিল। তাঁরা সেই পরীক্ষা ভণ্ডুল করার জন্য প্রবেশপত্র লুট করেন। সায়েন্স ল্যাবরেটরির পাশে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের একটি ক্যাম্প। এই ক্যাম্পে ছিল কয়েকজন পাকিস্তানি মিলিশিয়া। জুলাই মাসের একদিন রাত নয়টার দিকে তিনি ও কয়েকজন সহযোদ্ধা সেই ক্যাম্পে আকস্মিকভাবে হামলা করেন। তাঁদের হামলায় বেশ কয়েকজন মিলিশিয়া ও তাদের সহযোগী আনসার হতাহত হয়।

১৫ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে শেখ আবদুল মান্নানসহ আরও দুজন গ্রিন রোডের ওয়াপদা (এখন পানি উন্নয়ন বোর্ড) অফিসের পাকিস্তানি ক্যাম্পে হামলা চালান। হতভম্ব পাকিস্তানি মিলিশিয়ারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই এলাকা থেকে তাঁরা দ্রুত সরে পড়েন। এরপর তিনি অপারেশন করেন ২১ আগস্ট। এই অপারেশনের নেতৃত্বে ছিলেন তিনিই। সহযোদ্ধা ছিলেন দুলাল, বজলুল মাহমুদ, আবদুল্লাহ ও আলমগীর। রাত একটার দিকে গ্রিন রোডে মাইন পুঁতে তাঁরা অবস্থান নেন হোটেল নূরের দোতলায়। তাঁদের কাছে অস্ত্র বলতে ছিল দুটি এসএমজি, দুটি এসএলআর। রাত দুইটার দিকে সেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জিপ ও লরি আসামাত্র মাইনগুলো বিস্ফোরিত হয়। তখন তাঁরা একযোগে কিছুক্ষণ গুলি করে সরে পড়েন। তাঁদের হামলায় সেদিন বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জিপ ও লরি। এই অপারেশনের খবর বিবিসিতে প্রচারিত হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান