বিজ্ঞাপন
default-image

একাত্তর সালের শুরুতে পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর বাঙালি সদস্যদের ছুটি প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেখ আজিজুর রহমান মার্চের শুরুতে স্ত্রীর অসুখের কথা বলে ছুটি নেন। করাচি থেকে ৭ মার্চ বাংলাদেশে পৌঁছান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সহকর্মী মোখলেসুর রহমানকে নিয়ে নিজ এলাকা কামারখালী কলেজ মাঠে স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করেন তিনি। তেমন কোনো অস্ত্র ছিল না তাঁদের। তা সত্ত্বেও নিজের জ্ঞান সম্বল করে শতাধিক যুবককে প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। এক মাস পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কামারখালী দখল করলে তাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন। শেখ আজিজুর রহমান এবার নিজ এলাকার যুবকদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে পাঠাতে থাকেন। জুলাই মাসে তিনি নিজেও ভারতে যান। কলকাতার থিয়েটার রোডে বাংলাদেশ সরকারের কার্যালয়ে গেলে তাঁকে কল্যাণীতে মুক্তিবাহিনীর ৮ নম্বর সেক্টরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তাঁরা জানান, মুক্তিবাহিনীর জন্য বিমানবাহিনী গঠন করা হবে।

কল্যাণী ক্যাম্পে দুই মাস থাকার পর বিমানবাহিনী গঠনের কোনো কার্যক্রম না দেখে আজিজুর রহমান ১৪ জন সঙ্গীকে নিয়ে সেক্টর কমান্ডার এম এ মঞ্জুরের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশের ভেতরে যুদ্ধ করার অনুমতি চান। তখন তাঁদের বয়রা সাব-সেক্টরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে বেশ কয়েক দিন থাকার পর ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা তাঁদের গোপালগঞ্জে যেতে বলেন। সেপ্টেম্বরে বয়রা থেকে গোপালগঞ্জে যাওয়ার পথে মাগুরার শালিখা থানার আড়পাড়ার পশ্চিমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দলের সামনে পড়েন তাঁরা। শুরু হয় যুদ্ধ। ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধারাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। আজিজুর রহমানসহ যোদ্ধারা রাস্তার একপাশে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সাধারণ অস্ত্র দিয়ে মুখোমুখি যুদ্ধ করেন বীরত্বের সঙ্গে। ওই যুদ্ধে বিমানসেনা মান্নান, হানিফ ও তিন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ হারান। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ১৮ জন নিহত হয়। গ্রামের মানুষ পাঁচ মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করেন। বেঁচে যাওয়া যোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে আজিজুর রহমান মাগুরা, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি অপারেশন চালান এবং রাজাকার ক্যাম্প দখল ও সড়কের কালভার্ট ধ্বংস করেন। গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়ায় ছিল পাকিস্তানি সেনাদের একটি ক্যাম্প। ডিসেম্বরের ১২-১৩ তারিখে মুক্তিবাহিনী ওই ক্যাম্প আক্রমণ করে। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে তিনিও অংশ নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান