বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের ২১ জুলাই খুব সকালে শিকদার আফজাল হোসেন খবর পেলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী একদল ইপিসিএএফ কুমিল্লা থেকে বুড়িচং আসছে। খবর পেয়েই সিদ্ধান্ত নিলেন তাদের অ্যামবুশ করার। তখন বুড়িচং থানা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বুড়িচং কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত। পাশেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত। এই এলাকা দিয়েই ভারত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা ও অন্যান্য স্থানে যাতায়াত করতেন। সে জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীরা এই এলাকায় বেশি বিচরণ করত। মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর ঝটিকা আক্রমণ চালাতেন।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিকদার আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা গোপনে অবস্থান নিলেন বুড়িচং থানার এক গ্রামে। গাছের লতাপাতা, ঝোপঝাড় বা গাছের আড়ালে তাঁরা ওত পেতে থাকেন। তারপর সময় গড়াতে থাকে। একসময় তাঁরা দেখতে পান, মাঠের ভেতর দিয়ে ইপিসিএএফ সদস্যরা দল বেঁধে আসছে। বেশ নিশ্চিন্তেই এগিয়ে আসছে তারা। তখন সকাল আনুমানিক নয়টা। শিকদার আফজাল হোসেন ও তাঁর সহযোদ্ধাদের আঙুল অস্ত্রের ট্রিগারে। তারা অস্ত্রের আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়ল কয়েকজন। হকচকিত ইপিসিএএফ সদস্যরা দৌড়াদৌড়ি করে যে যেখানে পারল অবস্থান নিল। বিপর্যয় কাটিয়ে ইপিসিএএফ সদস্যরাও প্রবলভাবে পাল্টা আক্রমণ করলে শুরু হয় যুদ্ধ। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। ইপিসিএএফ ছিল তাঁদের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। আর তাঁরা ছিলেন মাত্র ২৮ জন। সন্ধ্যার পর ইপিসিএএফ সদস্যরা পিছু হটে বুড়িচং থানায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। যুদ্ধে ইপিসিএএফের ৩০ জন নিহত হয়। ছয়জন তাঁদের হাতে ধরা পড়ে। মুক্তিবাহিনীর নায়েক কবির শহীদ হন এবং শেখ আলম ও আবদুল আলিম আহত হন।

শিকদার আফজাল হোসেন চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন কুমিল্লা সেনানিবাসে। ২৫ মার্চ আক্রান্ত হওয়ার পর অন্যদের সঙ্গে বিদ্রোহ করে সেনানিবাসের ভেতরে শুরু হওয়া প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় তিনি সেনানিবাস ছেড়ে আসেন। পরে ২ নম্বর সেক্টরের মতিনগর সাব-সেক্টর এলাকায় গেরিলাযুদ্ধ করেন। তাঁকে একটি গেরিলাদল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। বুড়িচং, দেবীদ্বার, মুরাদনগর ও চান্দিনা থানার কিছু অংশে তাঁরা গেরিলাযুদ্ধ করেন। বেশ কয়েকটি সফল অপারেশনে নেতৃত্ব দেন তিনি।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান