বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের ২৫ আগস্ট মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা ঢাকার ধানমন্ডিতে দুর্ধর্ষ এক গেরিলা অপারেশন চালান। এরপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডে তোলপাড় শুরু হয়। এই অপারেশনে অংশ নিয়েছিলেন শাফী ইমাম রুমী। কয়েক দিন পর শাফী ইমাম রুমীসহ তাঁর আরও কয়েকজন সহযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পরে অমানুষিক নির্যাতনে তিনি শহীদ হন।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আটক করেছিল ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য আবুল বারক আলভীকেও (শিল্পী)। তিনি বেঁচে যান। নির্যাতনের বর্ণনা আছে তাঁর লেখায়। তিনি লিখেছেন: ‘৩০ আগস্ট ভোরবেলা সুরকার আলতাফ মাহমুদের বাসা পাক সেনারা ঘিরে ফেলে। আলতাফ মাহমুদ ও অন্যান্যদের সঙ্গে আমাকেও ধরে নিয়ে যায়। ওখানে দেখলাম আমাদের অনেকেই ধরা পড়েছে। সেই পরিচিত মুখগুলোর মধ্যে ছিল রুমী, জুয়েল, বদি, হাফিজ, চুন্নু ভাই, বেলায়েত ভাই (ফতেহ আলীর দুলাভাই), উলফাতের বাবা, আলমের ফুফা আরো অনেকে।

‘রুমীকে শুধু একদিনই দেখেছি। রুমীকে বেশ বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল প্রচণ্ড টর্চার করা হয়েছে। দুপুরের পর ওকে নিয়ে গেল। তারপর আর দেখা হয় নাই। আমাকেও আমার সহযোদ্ধা অন্যান্য গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন কথা বের করার জন্য অনেক টর্চার করা হয়েছে। রক্তাক্ত হয়েছে দেহ, আঙুলগুলো ভেঙে গেছে। হাত-পিঠ ফেটে রক্ত বেরিয়েছে। থেঁতলে দিয়েছে সারা শরীর। অতএব আমিও জানি, রুমীর কাছ থেকেও কথা বের করতে এই নির্দয় পাক সেনারা কি কি করতে পারে।’

রুমীর সহযোদ্ধা হাবিবুল আলম লিখেছেন: ‘রুমী খুব বেশি দিন যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেনি। একজন মুক্তিযোদ্ধা কতগুলো অ্যাকশন করেছে, সেটা বড় কথা নয়। যদি একটা অ্যাকশনে সে সাহস ও বীরত্ব দিয়ে সফল হতে পারে, সেটাই বড় কথা। রুমী ঢাকার অপারেশনে অনেক বেশি সাহসের পরিচয় দিয়েছিল। আর এ রকমই একটি দুঃসাহসী অপারেশন ছিল ২৫ আগস্ট, ১৯৭১ তারিখ।’

শাফী ইমাম রুমী ১৯৭০ সালে এইচএসসি পাস করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু ক্লাস শুরু হতে বিলম্ব হওয়ায় কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়াশোনা করেন। ১৯৭১ সালে আমেরিকার ইলিনয় স্টেটের ইলিনয় ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তি হন। সেপ্টেম্বর মাস থেকে সেখানে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। জুনের মাঝামাঝি মায়ের অনুমতি নিয়ে তিনি ভারতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান