বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্ত এলাকায় নিজেদের ক্যাম্প প্রহরায় আরও কয়েকজনসহ মুক্তিযোদ্ধা রবিউল হক। ক্যাম্পের পাশেই রাখা পাকিস্তানি সেনাদের ফেলে যাওয়া বিপুল অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। হঠাত্ তাঁদের ক্যাম্পের আশপাশে পড়তে লাগল গোলা। বিভ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধারা বোঝার চেষ্টা করলেন সেগুলো আসছে কোন দিক থেকে। তাই তাঁরা দ্রুত নিরাপদ অবস্থানে যেতে লাগলেন। এ ঘটনা ঘটেছিল পাঠাননগরে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে।

পাঠাননগর ফেনী জেলার অন্তর্গত। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা বিলোনিয়া দখল করলে পাকিস্তানি সেনারা পাঠাননগরে সমবেত হয়। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় এবং পেছন দিকে পালিয়ে যায়। তারা ফেলে যায় অসংখ্য গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র। মুক্তিযোদ্ধারা সেগুলো সংগ্রহ করে পাঠাননগরে তাঁদের ক্যাম্পে জমা করেন। ওদিকে পাকিস্তানি সেনাদের একাংশ পালিয়ে যায় চট্টগ্রামের দিকে। অপর দলটি যায় লাকসামের দিকে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পিছু ধাওয়া করেন এবং হাতেগোনা কয়েকজন থেকে যান ক্যাম্প, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের পাহারায়। এই দলে ছিলেন রবিউল হক।

৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা ফেনী মুক্ত করেন। এরপর তাঁরা অগ্রসর হন চট্টগ্রামের দিকে। এ সময় পলায়নরত পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত যুদ্ধ হয়। এসব যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক হারে দূর ও স্বল্প পাল্লার কামানের গোলা নিক্ষেপ করে। একদিন সেসব গোলারই কিছু এসে পড়ে পাঠাননগরে। এসব গোলার আঘাতে সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। হঠাত্ এই সময় একটি গোলা এসে পড়ে রবিউল হকের একদম কাছে। বিস্ফোরিত গোলার স্প্লিন্টার সরাসরি আঘাত হানে তাঁর শরীরে। তিনি শহীদ হন। পরে সহযোদ্ধারা রবিউল হকের মরদেহ পাঠিয়ে দেন তাঁর গ্রামের বাড়িতে। সেখানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

রবিউল হক চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ময়মনসিংহ ইপিআর সেক্টরের অধীনে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাবসেক্টরে তিনি যুদ্ধ করেন। বিলোনিয়া, পরশুরামসহ আরও কয়েকটি জায়গায় সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান