বিজ্ঞাপন
default-image

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কয়েক বছর ধরে অসুস্থ। অসুস্থতার কারণে এখন স্মৃতিশক্তি ও মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেছেন। শুধু বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রীরে আমরার কথা কইওবায়নি (প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের কথা বলবেন কি)?’

রফিকুল ইসলাম ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাব-সেক্টর এলাকায়। বিলোনিয়ার যুদ্ধে আহত হন। যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছোড়া শেলের টুকরা আঘাত করে তাঁর পায়ের গোড়ালি ও হাঁটুতে। চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে আবার যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। এর কদিন পরই দেশ স্বাধীন হয়।

বিলোনিয়া ফেনীর অন্তর্গত। সেখানে বিভিন্ন জায়গায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থান। ২ নভেম্বর থেকে বিলোনিয়ায় যুদ্ধ শুরু হয়। সেদিন মধ্যরাতে মুক্তিযোদ্ধারা রাজনগর থেকে বিলোনিয়ায় অনুপ্রবেশ করেন। ৩ নভেম্বর সকাল পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রবেশ টের পায়নি। এ সময় এক স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা টহলে বের হওয়া কয়েকজন পাকিস্তানি সেনাকে প্রথম আক্রমণ করেন। এই আক্রমণে ওই টহল দলের সব পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। এরপর যুদ্ধ শুরু হয়। সারা দিন চলে সেই যুদ্ধ।

৪ নভেম্বরও তা থেমে থেমে চলে। এদিন বিকেলে পাকিস্তানি চারটি জঙ্গি বিমান মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে বোমাবর্ষণ করে। পরদিন থেকে টানা যুদ্ধ চলে। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে পাকিস্তানি সেনাদের অবরোধ করেন। অবরুদ্ধ হয়ে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন অবস্থানে ক্রমাগত গোলাবর্ষণ করতে থাকে। পরে সরাসরি আক্রমণও শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করেন। শেষ পর্যন্ত ১০ নভেম্বর বিলোনিয়ার বেশির ভাগ এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে ফেনীর কাছাকাছি অবস্থান নেয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান