বিজ্ঞাপন
default-image

থানার চারদিকে অস্ত্র হাতে অবস্থান নিয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল। একটি দলে আছেন রফিকুল আহসান। তাঁদের সবার নেতৃত্বে সাব-সেক্টর কমান্ডার শাহজাহান ওমর। মুক্তিযোদ্ধাদের এবার যুদ্ধ করতে হলো একদল বাঙালির বিরুদ্ধেই।

এ ঘটনা ১৯৭১ সালের। ঘটেছিল বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। বাকেরগঞ্জ ছিল ৯ নম্বর সেক্টরের অধীন একটি এলাকা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের কখনো কখনো যুদ্ধ করতে হয়েছে বাঙালিদের বিরুদ্ধে। তখন মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়। সে সময় বাকেরগঞ্জে পাকিস্তানি সেনারা ছিল না। থানায় ছিল তাদের সহযোগী একদল বাঙালি রাজাকার ও পুলিশ। সংখ্যায় ছিল তারা ৩০০ থেকে ৪০০ জন। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মালেক। তাঁর ধারণা, এ দেশ কোনো দিন স্বাধীন হবে না।

৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা ওই থানা ঘেরাও করে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী রাজাকার ও পুলিশকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। কিন্তু বাঙালি ওসি মালেক তা প্রত্যাখ্যান করেন। সকালে শুরু হয় যুদ্ধ। কয়েক দিন চলে সেই যুদ্ধ। ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমণ চালান। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে। মুক্ত হয় বাকেরগঞ্জ থানা। এ যুদ্ধে রফিকুল আহসান যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এই সাহসী যোদ্ধা মায়ের অনুপ্রেরণায় বাবার বন্দুক হাতে তুলে নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। বাকেরগঞ্জের নাসির বাহিনীর সঙ্গে থেকে পাকিস্তানি সেনাদের ঘাঁটি, লঞ্চ ও গানবোটে আক্রমণ পরিচালনায় তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কালিশুরী যুদ্ধ, বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নে নদীপথে পাকিস্তানি সেনাবাহী লঞ্চে আক্রমণ, শ্যামপুর এবং ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার চাচৈর যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

রফিকুল আহসানের ডাকনাম বাদশা। সবার কাছে তিনি রফিকুল আহসান বাদশা নামেই পরিচিত।

রফিকুল আহসান জানতে পারেননি, তিনি বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন। ১৯৯২ সালে সরকার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে খোঁজ নিতে শুরু করলে তাঁর খেতাব পাওয়ার কথা জানা যায়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান