বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর একদল মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার গঙ্গাসাগর ও তালশহরে। দুটি উপদল অগ্রবর্তী দল হিসেবে অবস্থান নেয় দরুইন গ্রামে। মো. হোসেন (মোহাম্মদ হোসেন) ছিলেন একটি উপদলের নেতৃত্বে। অপর উপদলের নেতৃত্বে ছিলেন মোস্তফা কামাল (বীরশ্রেষ্ঠ, দরুইন যুদ্ধে শহীদ)।

১৮ এপ্রিল সকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ওই এলাকায় উপস্থিত হয়। তারা দূর থেকে গোলাগুলি শুরু করে। সেদিন আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রথমে দক্ষিণ দিকে অবস্থান নিয়ে আক্রমণের ব্যাপক মহড়া প্রদর্শন করে। এতে মুক্তিযোদ্ধারা মনে করেন যে মোগড়াবাজার ও গঙ্গাসাগরেই পাকিস্তানিরা আক্রমণ করবে। এ জন্য তাঁরা মূল শক্তি সেদিকেই বেশি নিয়োজিত করে আক্রমণ মোকাবিলার প্রস্তুতি নেন।

পাকিস্তানিরা প্রকৃত আক্রমণ শুরু করে পশ্চিম দিক অর্থাত্ দরুইনের দিক দিয়ে। এতে মুক্তিযোদ্ধারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের এই বিভ্রান্তি ও বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানিরা দ্রুত দরুইন গ্রামের খুব কাছে পৌঁছে যায়। মোহাম্মদ হোসেন ও মোস্তফা কামাল সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিপুল বিক্রমে পাকিস্তানিদের অপ্রত্যাশিত ওই আক্রমণ প্রতিহত করেন। দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

দরুইন গ্রামের দিকে আগত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই দলটি ছিল বেশ বড় ও বেপরোয়া। ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। সংখ্যানুপাতে মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে তারা ছিল অনেক বেশি।

মোহাম্মদ হোসেন ও মোস্তফা কামাল এতে মনোবল হারাননি। সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসের সঙ্গে লড়াই অব্যাহত রাখেন। কিন্তু একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাদের একাংশ তাঁদের পেছনে অবস্থান নেয়। পাকিস্তানিরা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। ফলে তাঁরা প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে অর্থাত্ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়েন। এ অবস্থায় তাঁদের পশ্চাদপসরণ করা ছাড়া আর উপায় থাকে না।

কাভারিং ফায়ারের ছত্রচ্ছায়ায় মোহাম্মদ হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে নিরাপদেই পশ্চাদপসরণ করেন। অপর উপদলের মুক্তিযোদ্ধারাও পশ্চাদপসরণ করেন। কিন্তু ওই দলের দলনেতা মোস্তফা কামাল কাভারিং ফায়ার দেওয়ার সময় পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণে শহীদ হন। সেদিন যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে চারজন শহীদ ও কয়েকজন আহত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান