বিজ্ঞাপন
default-image

প্রতিরক্ষা অবস্থানে মোহাম্মদ লোকমান ও তাঁর সহযোদ্ধারা সতর্ক। যেকোনো সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আক্রমণ করতে পারে। রাতে পালা করে তাঁদের কেউ ঘুমালেন, কেউ জেগে থাকলেন। ভোর হতেই শুরু হলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ চালালেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা বেশ বেপরোয়া। গোলাগুলিতে হতাহত হলো বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। তার পরও তারা এগিয়ে আসতে থাকল। মোহাম্মদ লোকমান ও তাঁর সহযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করতে থাকলেন। থমকে গেল পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা। প্রচণ্ড গোলাগুলি চলতে থাকল। এ সময় হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়লেন মোহাম্মদ লোকমান। এ ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ৫ জুন ছাগলনাইয়ায়।

ছাগলনাইয়া ফেনী জেলার অন্তর্গত থানা (বর্তমানে উপজেলা)। ১৯৭১ সালে ফেনীর বিলোনিয়া এলাকা ২২ জুন পর্যন্ত মুক্ত ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত বিলোনিয়ায় অবস্থান নিয়ে আশপাশের এলাকায় অপারেশন পরিচালনা করছিলেন। জুনের প্রথমার্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্ত বিলোনিয়া এলাকা দখলের জন্য অভিযান শুরু করে। ৩ জুন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ফেনী থেকে বান্দু-দৌলতপুর রেললাইন ও ছাগলনাইয়া হয়ে উত্তর দিক অভিমুখী লাইন ধরে অগ্রসর হতে থাকে।

প্রথম দিন তারা প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি। ৪ জুন মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রবর্তী দলের সঙ্গে তাদের প্রথম যুদ্ধ হয়। সেদিন তারা প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে পিছু হটে। পরদিন, অর্থাৎ ৫ জুন তারা অতর্কিতে আবার আক্রমণ শুরু করে। এদিন ছাগলনাইয়ার দিক দিয়ে অগ্রসর হতে থাকা পাকিস্তানি সেনাদের দল ছিল বেশ বেপরোয়া। ছাগলনাইয়ায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রসর হতে থাকা পাকিস্তানি সেনাদের বিপুল বিক্রমে প্রতিরোধ করেন। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তার পরও তারা এগোতে থাকে। তখন ছাগলনাইয়ায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। কয়েক ঘণ্টা চলা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীই জয়ী হয়। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে মোহাম্মদ লোকমানসহ তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও কয়েকজন আহত হন। মোহাম্মদ লোকমান একটি বাংকারে ছিলেন। সেখান থেকেই যুদ্ধ করছিলেন। হঠাৎ তাঁর শরীরে একঝাঁক গুলি লাগে। তিনি শহীদ হন। সেদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরও ৪০-৫০ জন হতাহত হয়। যুদ্ধ শেষে মোহাম্মদ লোকমানসহ তিনজন শহীদের মরদেহ সমাহিত করা হয় পাঠাননগরে।

মোহাম্মদ লোকমান চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন সিলেট ইপিআর সেক্টরের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। তিনি যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাব-সেক্টরের অধীনে। শুভপুর, মুন্সিরহাটসহ কয়েকটি জায়গায় যুদ্ধে সাহসের পরিচয় দেন তিনি।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান