বিজ্ঞাপন
default-image

চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের অবদান অসামান্য। তাঁর নেতৃত্ব ও পরিচালনায় বাঙালি ইপিআর সেনারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসীম বীরত্ব ও সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

এখন জানা যাক রফিকুল ইসলামের নিজ বয়ানে কিছু কথা: ‘২৫ মার্চ ১৯৭১, বৃহস্পতিবার। অন্যান্য দিনের মতো সকাল সাতটায় অফিসে গেলাম। সেখানে পৌঁছেই দেখি পাকিস্তানি মেজর ইকবাল বসে আছেন।...সেদিন বেলা দুইটায় ইপিআর সদর দপ্তর ত্যাগ না করা পর্যন্ত মেজর ইকবাল আমাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করল।

‘চারটা ৩০ মিনিটের দিকে ডা. জাফর আমার বাসায় এলেন।...রাত আটটার দিকে তিনি ঢাকার কোনো সংবাদ এসেছে কি না জানার জন্য আওয়ামী লীগ অফিসে গেলেন। (রাতের খাবার) খাওয়া শুরু করেছি, এ সময় একজন আওয়ামী লীগ কর্মীসহ তিনি ফিরে এলেন। (ডা. জাফর বলেন) “মনে হচ্ছে আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া গোপনে করাচি গেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানি সেনারা ট্যাংক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।”...আমি গভীর চিন্তায় ডুবে গেলাম।

‘সেনাবাহিনী ট্যাংক নিয়ে বেরিয়ে থাকলে নিশ্চয় ভয়ানক কিছু ঘটাবে। ...২৫ মার্চ সন্ধ্যায় এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম ইপিআরের দুটি ওয়্যারলেস সেটই ঢাকার পিলখানার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিল না। এমন কোনো দিন ঘটেনি। সন্দেহ গভীর থেকে গভীরতর হয়ে উঠল।

‘এ সময় নিজের ভেতর থেকে আমি যেন এক অলৌকিক সাহস অনুভব করলাম। মনে হলো, আমার ভেতর থেকে কে যেন আমাকে বলছে নিজের জীবন ও অন্যদের জীবন রক্ষার জন্য পশুশক্তির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।...“হয় স্বাধীনতা অর্জন, না হয় ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যু”—এ ধরনের এক চরম সিদ্ধান্ত নিলাম। ডা. জাফরকে বললাম, আমাদের জনগণকে মুক্ত করার জন্য আমি আমার বাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করব।

‘রাত আটটা ৪৫ মিনিট। আমি শেষবারের মতো আমার সারসন রোডের বাসভবন ত্যাগ করলাম। ওয়্যারলেস কলোনির দিকে আমাদের গাড়ি ছুটে চলল।...ক্যাপ্টেন হায়াতের রুমের সামনে জিপ থামালাম। সাবধানে তার কক্ষের দিকে এগিয়ে গেলাম। খুব আস্তে দরজা নক করলাম। বন্ধুসুলভ গলায় বললাম, “হ্যালো হায়াত, ঘুমিয়ে পড়েছ নাকি?” আমার গলার স্বর চিনতে পেরে সে আলো জ্বালাল। আমি দরজা খোলার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে।...আমি স্টেনগান তাঁর বুকে ধরে বললাম, “আমি দুঃখিত হায়াত, তোমাকে গ্রেপ্তার করতে হচ্ছে।” সে তার পিস্তল বের করে ধরলে ড্রাইভার কালাম (বাঙালি) দ্রুত এগিয়ে আসে। অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে প্রথম কাজ সমাধা হলো।’

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান