বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে আকস্মিক আক্রমণ করে বসে পাকিস্তানি সেনারা। ফলে নিমেষে শুরু হয়ে গেল প্রচণ্ড যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। এমনি এক জায়গায় অবস্থান নিয়ে আছেন মোহাম্মদ উল্লাহ তাঁর জনাকয়েক সঙ্গীসাথি সব। তাঁরা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ মোকাবিলা করতে লাগলেন। যুদ্ধ চলছে সমানতালে।

একটু পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের তীব্রতা প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গেল। বিপুল শক্তি নিয়ে এসেছে তারা। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে এসে পড়ছে মুহুর্মুহু রকেট শেল।

আক্রমণের প্রচণ্ডতায় বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়লেন। তাঁরা কেউ কেউ পিছু হটে যেতে লাগলেন। মোহাম্মদ উল্লাহ ও তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধা এতে বিচলিত হলেন না। সাহসের সঙ্গে তাঁরা যুদ্ধ করে চললেন। তাঁদের বীরত্বে থেমে গেল পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা। তবে বেশিক্ষণ পারলেন না। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন মোহাম্মদ উল্লাহসহ তিনজন মুক্তিযোদ্ধা। শহীদ হলেন তাঁরা।

এরপর ভেঙে পড়ল মুক্তিযোদ্ধাদের সব প্রতিরোধ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দখল করে নিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের নভেম্বরের শেষ দিকের। ঘটেছিল শেষ রাতের দিকে। মোহাম্মদপুরের পাশে গোয়ালহাটে। যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার অন্তর্গত মোহাম্মদপুর। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকা। সেখানে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখানেই হঠাত্ করে আক্রমণ করে। সেদিন ছিল ঈদের দিন। চৌগাছা এলাকা ছিল মুক্তিবাহিনীর ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাবসেক্টরের আওতাধীন এলাকা। এখানে যুদ্ধ করেন মুক্তিযোদ্ধা অলীককুমার গুপ্ত (বীর প্রতীক, পরে মেজর)। মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। অলীককুমার গুপ্তের ১৯৭৩ সালে দেওয়া ভাষ্যে ধরা আছে এই যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

তিনি বলেন, ‘...গুলবাগপুর গোয়ালহাট নামক স্থানে পাকিস্তানি সেনারা আমার দলের ওপর ঈদের দিন আক্রমণ করে তা দখল করে নেয়। এই যুদ্ধে নয়জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। তিনজন মুক্তিযোদ্ধাসহ তিনজন সাধারণ মানুষও শহীদ হন। জনসাধারণ আহত মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। জনসাধারণ সেই সময় এই এলাকায় কাজ করেন মুক্তিবাহিনীর জন্য। সেদিন কর্নেল মঞ্জুর (এম এ মঞ্জুর বীর উত্তম) ছয়-সাত ঘণ্টার মধ্যে ওই এলাকা পুনরুদ্ধার করার হুকুম দেন। পাল্টা আক্রমণকালে পাকিস্তানি বিমান আমাদের আক্রমণ করে। পরে ভারতীয় সেনাদের সাহায্যে ওই এলাকা আমরা পুনরায় দখল করি।’

মোহাম্মদ উল্লাহ চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে সেপাই হিসেবে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টরের অধীনে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন বয়রা সাবসেক্টরের অধীনে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান