বিজ্ঞাপন
default-image

অবাঙালি মোহাম্মদ আলীর পৈতৃক নিবাস ভারতের মাদ্রাজে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর সেখান থেকে তিনি একা পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) আসেন। পরে যোগ দেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহরে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সেনা কর্মকর্তা, এনসিও-জেসিও এবং সেনারা মেজর জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম, পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি) নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তখন তিনিও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ তাঁর এই আগ্রহে সন্দেহ প্রকাশ করলেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে প্রতিরোধযোদ্ধাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি দলের অধীনে বাঙালিদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন।

২৯ মার্চ অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনারা চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে কালুরঘাটে সমবেত হন। ৩০ মার্চ সেনাদের একাংশ জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে রামগড়ে যায়। একাংশ থেকে যায় কালুরঘাটে। বাকি সবাই বান্দরবানের কাছাকাছি অবস্থান নেন। মোহাম্মদ আলী বান্দরবানে ছিলেন। ১১ এপ্রিল কালুরঘাটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। কালুরঘাটের পতন হলে সেখানে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারাও মেজর শওকত আলীর (বীর উত্তম, পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল) নেতৃত্বে বান্দরবানে সমবেত হন। তাঁর দলটি সেখানে মাত্র এক দিন অবস্থান করার পর রামগড়ে চলে যায়। কিন্তু মোহাম্মদ আলীদের দল বান্দরবানেই অবস্থান করতে থাকে। দিন কয়েক পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁদের আক্রমণ করে। তখন সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মোহাম্মদ আলী যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব দেখান। যুদ্ধের একপর্যায়ে তিনি শহীদ হন। প্রতিরোধযোদ্ধারা সেখানেই তাঁকে সমাহিত করেন। কিন্তু সেই কবর তাঁরা চিহ্নিত করে রাখেননি।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোহাম্মদ আলীর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেনি, তিনি কী অবস্থায় আছেন। স্বাধীনতার পর জানতে পারে, তিনি শহীদ হয়েছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি কালুরঘাটে এক যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। তাঁর ছেলেমেয়েরা তখন ছোট। স্ত্রীর বাড়িও ছিল মাদ্রাজে। বাংলাদেশে তাঁর কোনো আত্মীয়স্বজন ছিল না। ১৯৭১ সালে তাঁর ছেলেমেয়েসহ স্ত্রী ছিলেন যশোরে। মোহাম্মদ আলী একসময় যশোর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। সেখানে কর্মরত অবস্থায় রসুলপুরে জায়গা কিনে বাড়ি করেছিলেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান