বিজ্ঞাপন
default-image

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পৌঁছে গেলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের কাছাকাছি। তাঁদের আরআর গোলার আঘাতে ধ্বংস হয়ে গেল পাকিস্তানি সেনাদের অনেক বাংকার। সন্ধ্যার মধ্যেই সেখানকার জীবিত পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে গেল। তাঁদের দখলে এল ছাতকের বিরাট এলাকা। এ ঘটনা ১৪ অক্টোবর ১৯৭১ সালের। সিলেট জেলার অন্তর্গত সুরমা নদীর তীরবর্তী ছাতক গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর। দেশের একমাত্র সিমেন্ট কারখানাও ছিল এখানে। এখানেই ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি। মুক্তিবাহিনীর ৫ নম্বর সেক্টরের শেলা সাব-সেক্টরের অধীন এলাকা।

ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকার একাংশ দখলে নেওয়ার পর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানতে পারলেন, সড়কপথে সিলেট থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নতুন একটি দল সেখানে আসছে। ১৫ অক্টোবর সকালে তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তিনটি হেলিকপ্টার দেখতে পান। সেগুলো থেকে তাঁদের অবস্থানের ওপর বিরামহীনভাবে মেশিনগানের গুলি বর্ষিত হতে থাকে। এতে তাঁর দলের অনেকে আহত হন; কিন্তু তাঁরা অবস্থান ধরে রাখেন।

১৬ অক্টোবর সকালে তাঁরা দেখতে পান, পেছনে উঁচু টিলার ওপরে কিছু পাকিস্তানি সেনা। সকালে সেখানে আবার শুরু হলো প্রচণ্ড যুদ্ধ। দিনভর যুদ্ধ চলার পর সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকাটি তাঁদের দখলে আসে। কিন্তু তাঁকে চিন্তিত করে তুলল পেছনে পাকিস্তানি সেনাদের আনাগোনা। ক্রমে তাদের সংখ্যা বাড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এরা সিলেট থেকে আসা নতুন পাকিস্তানি সেনা। দলটি তাদের চারদিক দিয়ে ঘেরাও করার চেষ্টা করছে। এ খবর পেয়ে তিনি উদ্বিগ্ন হলেন। কারণ, পাকিস্তানি সেনাদের পরিকল্পনা সফল হলে তাঁরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বেন।

তিনি পিছিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। পিছিয়ে যাওয়াও তখন তাঁদের জন্য সহজ নয়। তাঁরা কেউই ওই এলাকার পথঘাট চেনেন না। রেকি ও পরিকল্পনা ছাড়াই তাঁরা যুদ্ধ শুরু করেছেন। শেষ পর্যন্ত এ কাজে সহযোগিতা করল স্থানীয় এক রাজাকার। তাঁকে মুক্তিযোদ্ধারা আটক করার পর থেকে সে সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করছিল। ওখানকার চোরাপথ তার জানা ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা তার সঙ্গে হাওর-বিলের মধ্য দিয়ে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও গলাপানি অতিক্রম করে পেছনে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছাতে সক্ষম হন। এ অপারেশনের খবর তখন বিদেশি সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছিল।

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। তখন তাঁর পদবি ছিল ক্যাপ্টেন। ৩০ মার্চ তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। ৮ এপ্রিল বদরগঞ্জে এক যুদ্ধে তিনি আহত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান