বিজ্ঞাপন
default-image

যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম কাশিপুর। এখানে আছে একটি সেতু। দুপুরের দিকে কয়েকটি গাড়িতে করে শতাধিক পাকিস্তানি সেনা সেখানে হাজির হলো। সেতুর পূর্ব প্রান্তে গাড়ি রেখে তারা ছড়িয়ে পড়ল বিভিন্ন দিকে।

মোস্তফা কামাল ও তাঁর সহযোদ্ধারা ছিলেন সেতুর পূর্ব প্রান্তে। পাকিস্তানি সেনারা সেতু অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছিল নিশ্চিত মনে। তারা কল্পনাও করেনি মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি। এ সময় একসঙ্গে গর্জে উঠল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র। আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা হকচকিত ও দিশেহারা। তাদের বেশ কজন নিহত ও আহত হলো। অবশ্য তারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। যুদ্ধ চলল কয়েক ঘণ্টা। পাকিস্তানি সেনাদের বেশির ভাগই রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে গেল। যারা পালাতে পারল না, তারা আত্মগোপন করল।

এরপর মোস্তফা কামাল ও তাঁর সহযোদ্ধারা তাদের খুঁজতে লাগলেন। তিনি ও তাঁর এক সহযোদ্ধা আরব আলী যাচ্ছিলেন পাটখেতের পাশ দিয়ে। হঠাৎ তাঁরা দেখতে পান ছয় পাকিস্তানি সেনাকে। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল তাঁদের অস্ত্র। নিহত হলো তিন পাকিস্তানি সেনা। বাকি তিনজন আত্মগোপন করে একটি বাড়িতে। পরে তাদের লক্ষ্য করে তাঁরা গুলি চালান। এর মধ্যে একজন ছিল লেফটেন্যান্ট পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তা। তিনি মরার ভান করে পড়ে ছিলেন। মোস্তফা কামাল একা তাঁর কাছে যাওয়ামাত্র তিনি উঠে তাঁকে জাপটে ধরেন। দুজনের মধ্যে শুরু হয় হাতাহাতি। মোস্তফা কামাল শেষ পর্যন্ত ওই পাকিস্তানি লেফটেন্যান্টকে পরাস্ত করেন। ১৯৭১ সালের ২৭ কিংবা ২৮ জুনের ঘটনা এটি। সেদিন কাশিপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ১৫-১৬ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও অসংখ্য আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সুবেদার মনিরুজ্জামান (বীর বিক্রম) শহীদ হন এবং কয়েকজন আহত হন।

মোস্তফা কামাল ১৯৭১ সালে যশোর ইপিআর সেক্টরের বর্নি বিওপিতে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে তিনি ভারতে যান। পরে ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টরের গোয়ালহাটি-ছুটিপুর, বর্নি, গঙ্গাধরপুর, বেলতাসহ কয়েকটি জায়গায় যুদ্ধ করেন।

সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে মোস্তফা কামালসহ আরও চারজন গোয়ালহাটি-ছুটিপুরের অগ্রবর্তী প্যাট্রোল পার্টির দায়িত্বে ছিলেন। তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণ ও গতিবিধি লক্ষ করতেন। তাঁদের দলনেতা ছিলেন ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ (বীরশ্রেষ্ঠ)। এক দিন (৫ সেপ্টেম্বর) হঠাৎ পাকিস্তানি সেনারা তিন দিক থেকে তাঁদের ঘেরাও করে আক্রমণ চালায়। তখন তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধ করেন। এ যুদ্ধে দলনেতা নূর মোহাম্মদ শেখ শহীদ হন এবং সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া (বীর প্রতীক) আহত হন।

২০০৫ সাল পর্যন্ত মোস্তফা কামাল বিডিআরে চাকরি করেছেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান