বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালে মোজাম্মেল হক কিশোর। সবে দশম শ্রেণীতে উঠেছেন। ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাদের নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ নিজের চোখে দেখেন। তারপর শোনেন রেডিওতে স্বাধীনতার ঘোষণা। এসব ঘটনা তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে। বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে গেলেন ভারতে। মেলাঘরের ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দার তাঁকে গেরিলাবাহিনীর সদস্য হিসেবে রিক্রুট করে প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে একটি দলের সঙ্গে ঢাকায় পাঠানো হয় এক অপারেশনের জন্য। কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হন। পথিমধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর অ্যামবুশে পড়ে তাঁরা অস্ত্রশস্ত্র সব খোয়ান। এরপর তাঁরা ভারতে ফিরে গেলে ক্যাপ্টেন হায়দার জানান, তাঁদের আর কোনো দায়িত্ব দেওয়া হবে না। এ রকম সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও মোজাম্মেল হক তাঁর মনোবল হারাননি। তিনি লেগে থাকেন। এক দিন ক্যাপ্টেন হায়দার তাঁকে বললেন, ‘মোনায়েম খান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে। সে একজন কুখ্যাত লোক। তুমি কি তার বাড়িতে অপারেশন চালাতে পারবে?’

মোজাম্মেল হকের মুক্তিযোদ্ধা-জীবনে পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মোনায়েম খানের বাড়িতে অপারেশনই ছিল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ক্যাপ্টেন হায়দার তাঁকে এ কথা বলামাত্র তিনি রাজি হয়ে যান।

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের এক দিন মোজাম্মেল হক তাঁর চাচার সহযোগিতায় মোনায়েম খানের বাড়িতে ঢোকার সুযোগ পান। তাঁর সঙ্গীরা থেকে গেলেন বাইরে। তাঁর চাচা তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন ওই বাড়ির দুই কাজের লোকের সঙ্গে। তাঁরা মোনায়েম খানের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাঁদের সহযোগিতা সত্ত্বেও তিনি প্রথমবার সফল হলেন না। দুই-তিন দিন পর আবার গেলেন। এবারও ব্যর্থ হলেন। বাড়ির লোকজন ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা টের পেয়ে যাওয়ায় দেয়াল টপকে তিনি পালিয়ে যান। সেদিন কোনোমতে তাঁর জীবন বাঁচাতে সক্ষম হন। কয়েক দিন পর আবার গেলেন। এবার তাঁর সঙ্গে আছেন শুধু আনোয়ার হোসেন (বীর প্রতীক)।

এদিন তাঁরা সফল হলেন। সন্ধ্যার পর তিনি ও আনোয়ার হোসেন মোনায়েম খানের বাড়িতে ঢুকে ড্রয়িংরুমে গিয়ে একসঙ্গে স্টেনগানের গুলি চালান। আনোয়ার হোসেন একটি গ্রেনেডও ছুড়ে মারেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটি বিস্ফোরিত হয়নি। এরপর তাঁরা দ্রুত দেয়াল টপকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এর পরের ঘটনা তো ইতিহাস। মোনায়েম খান নিহত হওয়ার ঘটনা মুক্তিযুদ্ধে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান