বিজ্ঞাপন
default-image

রাতের অন্ধকারে মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে আক্রমণ চালালেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানের একদম কাছে গিয়ে সাহস আর বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন মোজাফফর আহমদ। হঠাত্ গুলিবিদ্ধ হলেন তিনি। পাকিস্তানি সেনাদের অস্ত্রের কয়েকটি গুলি এসে লাগল তাঁর শরীরে। সঙ্গে সঙ্গে নিভে গেল তাঁর জীবনপ্রদীপ। এ ঘটনা ঘটেছিল হরিপুরে ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর।

হরিপুর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অন্তর্গত। ১৯৭১ সালে এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাংলাদেশে-ভারত সীমান্তবর্তী অনেক এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে এলেও হরিপুর থেকে যায় পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে। সেদিন ভোররাতে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল একযোগে শত্রুপক্ষের অবস্থানে আক্রমণ চালায়।

মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে আক্রমণ চালালে পাকিস্তানি বাহিনী প্রথমে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাদের ঘাঁটি ছিল বেশ সুরক্ষিত। মুক্তিযোদ্ধারা, বিশেষত মোজাফফর আহমদের দল পাকিস্তানি সেনাদের তীব্র গোলাগুলি উপেক্ষা করে সাহসের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যান। তাঁরা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে থাকেন। দুই পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, এ সময় মোজাফফর আহমদ পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন।

কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হরিপুর থেকে পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে শত্রুপক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অনেক হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে মোজাফফর আহমদসহ চারজন শহীদ ও কয়েকজন আহত হন। যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা সহযোদ্ধাদের মরদেহ উদ্ধার করে সেখানেই সমাহিত করেন।

মোজাফফর আহমদ চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন রাজশাহী ইপিআর সেক্টরের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৭ নম্বর সেক্টরের লালগোলা সাবসেক্টরে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান