বিজ্ঞাপন
default-image

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চট্টগ্রাম জেলা শুরু হওয়ার আগে একটি ছোট ভূখণ্ড ঢুকে গেছে ভারতের ভেতরে। এর তিন দিকে ভারতীয় সীমান্ত। পরশুরাম থানার অন্তর্গত এ অঞ্চলেরই নাম বিলোনিয়া। প্রায় ২৮-২৯ কিলোমিটার লম্বা ও ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত এ অঞ্চল। ৩ জুন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রথম বিলোনিয়ায় আক্রমণ করে। যুদ্ধ চলে ২১ জুন পর্যন্ত।

বিলোনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ছিল মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান। পশ্চিম দিকে আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর নোয়াপাড়া এলাকায় ছিলেন মো. শহীদুল ইসলাম। ৩ জুন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল বান্দু-দৌলতপুর রেললাইন ও ছাগলনাইয়া থেকে উত্তর দিক অভিমুখী রেললাইন বরাবর অগ্রসর হয়ে প্রথম আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ চালালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং পিছু হটে। ১১ জুন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আবার আক্রমণ করে। এবারও তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এর পর থেকে প্রতিদিন সেখানে যুদ্ধ চলতে থাকে।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান নাজুক হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক বুঝতে পারলেন, পাকিস্তানি সেনাদের আর ঠেকানো যাবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন পশ্চাদপসরণের। মুক্তিবাহিনীর সব দলকে খবর পাঠালেন। এক জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি অধিনায়কের বার্তা পাননি। তিনি থেকে যান নিজেদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সেনার একটি বহর বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ করল তাঁদের অবস্থান লক্ষ্য করে। শুরু হলো প্রচণ্ড যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা মো. শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে চললেন।

২১ জুন বিকেলের দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার, ট্যাংক নিয়ে আক্রমণ শুরু করে। সারা রাত সেখানে যুদ্ধ চলে। গোটা এলাকায় গোলাগুলির ফলে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ছেড়ে যাওয়া এলাকা সহজেই দখল করে নেয়, শুধু নোয়াপাড়ার অংশ ছাড়া। মো. শহীদুল ইসলাম তাঁর দল নিয়ে কয়েক ঘণ্টা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেও শেষ পর্যন্ত পশ্চাদপসরণে বাধ্য হন। এভাবেই বিলোনিয়ার প্রথম যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

মো. শহীদুল ইসলাম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতান সেনানিবাসের ৬ সিগন্যাল ব্যাটালিয়নে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। পরে ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাব-সেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য অপারেশনের মধ্যে আছে ছাগলনাইয়া এবং ফুলগাজী রেল ও সড়কসেতু আক্রমণ।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান