বিজ্ঞাপন
default-image

মো. লনি মিয়া দেওয়ান সহযোদ্ধাদের নিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থান নিলেন। যেকোনো সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁদের আক্রমণ করতে পারে। সবার মধ্যে টানটান উত্তেজনা। সময় গড়াতে লাগল। রাতেই পাকিস্তানিরা আক্রমণ করে। সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে মো. লনি মিয়া দেওয়ান তাদের সেই আক্রমণ সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করে চললেন। সারা রাত যুদ্ধ চলল। এ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ঘটেছিল পাহাড়তলীতে।

পাহাড়তলী চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত। এ যুদ্ধের বর্ণনা সুকুমার বিশ্বাসের মুক্তিযুদ্ধে রাইফেলস ও অন্যান্য বাহিনী বইয়ে দেওয়া হয়েছে এভাবে:

‘...নায়েব সুবেদার লনি মিয়া দেওয়ান ২৫ মার্চ রাত ১১টায় ক্যাপ্টেন রফিকের (রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, পরে মেজর) নির্দেশক্রমে অবাঙালিদের বন্দী করে তাঁর প্লাটুন নিয়ে পাহাড়তলী স্টেশনে এসে পৌঁছান। ২৬ মার্চ রাতে রেলওয়ে বিল্ডিংয়ে ডিফেন্স নিলেন। রাত ১০টায় এই প্লাটুনটির ওপর যুদ্ধজাহাজ এন এস জাহাঙ্গীর থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ব্যাপকভাবে গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। সারা রাত উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। গোলাগুলিতে ইপিআর বাহিনীর অ্যামুনিশন প্রায় নিঃশেষ হয়ে এসেছিল। এদিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের আক্রমণের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর করল। অব্যাহত আক্রমণে ইপিআর বাহিনীর পক্ষে টিকে থাকা দুরূহ হয়ে ওঠে। এমতাবস্থায় ক্যাপ্টেন রফিকের নির্দেশক্রমে ২৭ মার্চ প্লাটুনটি সেখান থেকে স্টেট ব্যাংক ও কোতোয়ালি এলাকাতে ডিফেন্স নিল।’

মো. লনি মিয়া দেওয়ান চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম ইপিআর সেক্টরে। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। হেডকোয়ার্টার্স কোম্পানির একটি প্লাটুনের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। চট্টগ্রামে প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ১ নম্বর সেক্টরে। বিভিন্ন যুদ্ধে দলনেতা হিসেবে তিনি অসীম সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান