বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিবাহিনীর পলাশ গানবোটের ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার ছিলেন মো. রুহুল আমিন। তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা ৭ ডিসেম্বর ভারত থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন বাংলাদেশ অভিমুখে। দুই গানবোটে তাঁরা ছিলেন ৫৬ জন।

১০ ডিসেম্বর সকাল নয়টায় মংলা থেকে শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযান। ১১টার দিকে গানবোটগুলো শিপইয়ার্ডের কাছে পৌঁছায়।

এ সময় আকাশে দেখা যায় তিনটি জঙ্গি বিমান। শত্রুবিমান মনে করে মো. রুহুল আমিন সহযোদ্ধাদের নির্দেশ দেন বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে বিমান প্রতিরোধের। তাঁর সহযোদ্ধারা দ্রুত প্রস্তুত হন। কিন্তু তাদের বহরে থাকা ভারতীয় গানবোট প্যানভেল থেকে জানানো হয় ওগুলো ভারতীয় বিমান।

বিমানগুলো কিছুটা নিচে নেমে দক্ষিণ-পশ্চিমে সাগরের দিকে যায়। ১০-১১ মিনিট পর হঠাত্ ঘুরে এসে বোমা বর্ষণ করে পদ্মার ওপর। পরক্ষণেই পলাশে।

বোমার আঘাতে মুক্তিবাহিনীর গানবোটে আগুন ধরে যায়। বিপদ বুঝে যাঁরা আগেই পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, তাঁরা অক্ষত থাকেন। কিন্তু রুহুল আমিনসহ অনেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গানবোটেই ছিলেন। প্রথম আঘাতেই বোমার স্প্লিন্টার লেগে তাঁর বাঁ হাত ভেঙে যায়। তিনি মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এক সহযোদ্ধা (তাঁর নামও রুহুল আমিন) তাঁকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দেন।

আহত রুহুল আমিন আপ্রাণ চেষ্টায় সাঁতার কেটে নদীর পুবপাড়ে পৌঁছান। সেখানে অপেক্ষা করছিল আরেক বিপদ। নদীর পুব তীরে ছিল কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা ও অনেক রাজাকার। রাজাকাররা তাঁকে আটকের পর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। নদীতীরে পড়ে থাকে তাঁর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে নদীতীরের এক স্থানে সমাহিত করেন। তাঁর সমাধি চিহ্নিত ও সংরক্ষিত।

মো. রুহুল আমিন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কয়েক দিন পর মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনি মুক্তিবাহিনীর নৌদলে অন্তর্ভুক্ত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান