বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইসলামপুরে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক ঘাঁটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার অন্তর্গত ইসলামপুর।

ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিক। মো. মোহর আলীসহ এক দল মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হন ইসলামপুরের পাকিস্তানি সেনাঘাঁটির কাছে।

মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে পাকিস্তানি ঘাঁটিতে আক্রমণ চালান। পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ চালায়। গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধ করেও পাকিস্তানিদের উচ্ছেদ করতে পারেননি।

এই অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের কৌশল পাল্টাতে হয়। মো. মোহর আলীসহ কয়েকজন গ্রেনেডসহ হামাগুড়ি (ক্রল) দিয়ে এগিয়ে যান বাংকার লক্ষ্য করে। কিন্তু পাকিস্তানিদের প্রবল গোলাগুলির মুখে জীবন বাঁচাতে তাঁরা বেশির ভাগ পথেই থেমে যেতে বাধ্য হন। একপর্যায়ে মোহর একা হয়ে যান।

এতে মো. মোহর আলী দমে যাননি। মনোবলও হারাননি। প্রবল গোলাগুলির মধ্যেই পাকিস্তানিদের চোখ এড়িয়ে তিনি এক বাংকারের কাছে অবস্থান নিয়ে ওই বাংকারে গ্রেনেড ছোড়েন। নিখুঁত নিশানায় তা বাংকারের ভেতরে পড়ে। বিস্ফোরণে ওই বাংকার প্রায় ধ্বংস এবং সেখান থেকে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায়।

বাংকারে গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনায় হকচকিত হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। এই সাফল্য ও জয়ে মোহর আলীও অভিভূত হয়ে পড়েন। জয়ের অদম্য নেশায় তিনি পাকিস্তানিদের দ্বিতীয় বাংকারে গ্রেনেড ছোড়ার জন্য এগিয়ে যান। কিন্তু তাঁর দুর্ভাগ্য। দ্বিতীয় বাংকারের দিকে যাওয়ার সময় পাকিস্তানিরা তাঁকে দেখে ফেলে। তাঁকে লক্ষ্য করে ব্যাপক গোলাগুলি শুরু করে। অসংখ্য গুলি ছুটে আসে মো. মোহর আলীর দিকে। কয়েকটি গুলি সরাসরি আঘাত করে তাঁর শরীরে। ঢলে পড়েন তিনি। রক্তে ভেসে যায় মাটি। শহীদ হন তিনি। স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনার লড়াইয়ে যোগ হয় আরেকটি নাম।

এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারাই জয়ী হন। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের মুহুর্মুহু আক্রমণের মুখে ঘাঁটি ছেড়ে পেছনে গিয়ে অবস্থান নেয়। তাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে মোহর আলীসহ কয়েকজন শহীদ ও কয়েকজন আহত হন। যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা মো. মোহর আলীসহ শহীদ সহযোদ্ধাদের মরদেহ সমাহিত করেন ইসলামপুরের কাছেই সীমান্তসংলগ্ন গ্রামে। তাঁর সমাধি চিহ্নিত।

মো. মোহর আলী চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহরে। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েক। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে তিনি নিজ এলাকায় যান। পরে ৭ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান