বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথ বাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রতিরক্ষা অবস্থান ও ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাচ্ছে। ৭ নম্বর সেক্টরের লালগোলা সাবসেক্টরের অধীন একদল মুক্তিযোদ্ধা ১২ ডিসেম্বর হাকিমপুর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে অগ্রসর হতে থাকেন। এ দলের একজন সদস্য মো. নিজামউদ্দীন। পথে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পোড়াগ্রাম ঘাঁটি। মুক্তিযোদ্ধারা ওই ঘাঁটির কাছাকাছি হওয়ামাত্র পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। দুই পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণের মুখে কয়েকজন নিহত সহযোদ্ধা এবং অনেক অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যায়।

পরদিন ১৩ ডিসেম্বর মো. নিজামউদ্দীনসহ মুক্তিযোদ্ধারা রওনা হন বহরমপুরে দিকে। কাছাকাছি গিয়ে জানতে পারেন, পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পিছিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি আক্রমণ না করে অ্যামবুশের সিদ্ধান্ত নেন। নির্দেশ পেয়ে তাঁরা দ্রুত অবস্থান নেন পাকিস্তানি সেনাদের পালিয়ে যাওয়ার পথে। মুক্তিযোদ্ধারা সড়কের এক স্থানে দুই ধারের ঝোপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকেন। আশপাশে কোথাও মানুষজনের সাড়া নেই। চারদিক নিস্তব্ধ। যুদ্ধের ডামাডোলে স্থানীয় লোকজন নিরাপদ স্থানে চলে গেছে। সাহসী কয়েকজন শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আছেন। তাঁরা সাহায্যকারী ও পথপ্রদর্শক।

বেশিক্ষণ তাঁদের অপেক্ষা করতে হলো না। ৪০-৪৫ মিনিট পর মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে পেলেন, দুটি সেনাবাহী গাড়ি এগিয়ে আসছে। গন্তব্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ। গাড়ি দুটি গুলির আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠে মো. নিজামউদ্দীনসহ মুক্তিযোদ্ধাদের সবার অস্ত্র।

পাকিস্তানি সেনারা এমন আক্রমণের চিন্তাও করেনি। কারণ, তারা মনে করেছিল, মুক্তিযোদ্ধারা পেছনেই আছেন। আক্রমণের প্রথম ধাক্কাতেই হতাহত হয় বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। একটু পর পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে সেই আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকেন। এ সময় হঠাত্ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মো. নিজামউদ্দীন।

সহযোদ্ধারা গুরুতর আহত মো. নিজামউদ্দীনকে দ্রুত উদ্ধার করেন। কিন্তু চিকিত্সকের কাছে পাঠানোর আগেই নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ। যুদ্ধশেষে সহযোদ্ধারা তাঁর মরদেহ সমাহিত করেন সেখানেই।

সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যামবুশে সব পাকিস্তানি সেনাই নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে শুধু মো. নিজামউদ্দীন শহীদ ও দু-তিনজন আহত হন।

মো. নিজামউদ্দীন চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১-এ কর্মরত ছিলেন রাজশাহী সেক্টরের অধীনে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনর্গঠিত হয়ে যুদ্ধ করেন লালগোলা সাবসেক্টরে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান