বিজ্ঞাপন
default-image

ভারতের হলদিয়া নৌবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করল মুক্তিবাহিনীর দুটি জাহাজ ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’। পলাশ জাহাজে আছেন মো. দৌলত হোসেন মোল্লা। তিনি জাহাজের ক্রুম্যান। তাঁদের লক্ষ্য, খুলনায় পাকিস্তানি নৌঘাঁটি দখল করা। মুক্তিবাহিনীর দুটি জাহাজের সঙ্গে আছে মিত্রবাহিনীরও একটি জাহাজ। খুলনার রূপসা নদীতে শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি আসামাত্র ঘটল এক আকস্মিক বিপর্যয়। এ সময় আকাশে দেখা গেল তিনটি জঙ্গি বিমান। সেগুলো জাহাজের ওপর চক্কর দিয়ে চলে গেল সাগরের দিকে। তারপর আবার এগিয়ে এল জাহাজগুলো লক্ষ্য করে। বোমা বর্ষণ করল। প্রথম ধাক্কাতেই বিধ্বস্ত হলো পদ্মা। পলাশের ইঞ্জিনরুমে জ্বলছে দাউ দাউ আগুন। একটু পর পলাশও ডুবতে থাকল। ডেকে শহীদ নৌ-মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ পড়ে আছে। আহত যোদ্ধারা কাতরাচ্ছেন মৃত্যুযন্ত্রণায়। গুরুতর আহত মো. দৌলত হোসেন মোল্লা অনেক কষ্টে পানিতে ঝাঁপ দিলেন।

এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বরের। জাহাজ দুটি ভারত থেকে রওনা হয় ৭ ডিসেম্বর। সেদিন দুপুরে পৌঁছে খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে। মিত্রবাহিনীর বিমান পাকিস্তানি সেনাদের জাহাজ ভেবে ভুল করে পদ্মা ও পলাশ জাহাজে বোমাবর্ষণ করে। আত্মঘাতী এই বোমা হামলায় দুটি জাহাজেরই সলিলসমাধি হয়। এতে অনেক নৌ-মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও গুরুতর আহত হন। গুরুতর আহত মো. দৌলত হোসেন মোল্লাসহ কয়েকজন সাঁতরে নদীতীরে যান। কিন্তু সেখানে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিল আরেক বিপদ। নদীতীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী রাজাকার। মো. দৌলত হোসেন মোল্লা নদীতীরের যে স্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হন, সেখানে তিনি একটু পর দেখতে পান তাঁর সহযোদ্ধা আহত সিরাজুল মওলাকে। আহত দৌলত হোসেন নদীতীরে পড়ে ছিলেন। তিনি মারাত্মক আহত হয়েছিলেন। ক্রল করে বা হেঁটে যেতে পারছিলেন না। দৌলত মওলাকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। সন্তানের মুখটা দেখা হলো না।’ আহত মওলা চেষ্টা করেছিলেন মো. দৌলত হোসেন মোল্লাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু পারেননি। মওলা সামনে যেতে সক্ষম হন। তিনি বেঁচে যান। মো. দৌলত হোসেন মোল্লাকে পরে রাজাকাররা ধরে ফেলে। আহত দৌলত হোসেনকে রাজাকাররা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। রুহুল আমিনকেও একই ভাগ্য বরণ করতে হয়।

মো. দৌলত হোসেন মোল্লা চাকরি করতেন পাকিস্তানি নৌবাহিনীতে। ১৯৭১ সালের মার্চে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিবাহিনীর নৌ উইংয়ে যোগ দেওয়ার আগে স্থলযুদ্ধেও অংশ নেন। অক্টোবরে মুক্তিবাহিনীর নৌ উইং গঠিত হলে পলাশ গানবোটে তাঁকে গান ক্রুম্যান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর কয়েকটি নৌ অপারেশনে তিনি অংশ নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান