বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭ নম্বর সেক্টর থেকে সীমান্তসংলগ্ন বিভিন্ন শহরে বেশ কয়েকটি গেরিলা অপারেশন পরিচালিত হয়। এ অপারেশনে গণবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধাদেরও পাঠানো হতো, বিশেষ করে তাঁদের, যাঁদের বাড়ি অপারেশন এলাকায় বা যাঁরা ওই এলাকার সঙ্গে বেশি পরিচিত। মো. কামরুজ্জামান খলিফার নেতৃত্বে কয়েকবার মুক্তিযোদ্ধাদের পাঠানো হয় রাজশাহী শহরে।

জুলাই ও আগস্ট মাসের প্রথমার্ধে তিনি রাজশাহী শহর ও আশপাশ এলাকায় দুঃসাহসিক কয়েকটি আক্রমণ পরিচালনা করেন। এতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়, শহরেও তাদের চলাচল ব্যাহত ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। উপর্যুপরি অ্যামবুশ ও আক্রমণে দিশেহারা পাকিস্তানিরা তখন রাজশাহী শহরে নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় করে।

১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। ভারতে মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে খবর যায়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা রাজশাহী শহরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

১৩ আগস্ট মো. কামরুজ্জামান খলিফার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল পাঠানো হয় রাজশাহীতে। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং তাদের সহযোগী এই দিনটি বাঙালিদের সজাগ দৃষ্টির কারণে তাঁরা শেষ পর্যন্ত সেদিন শহরে কোনো অপারেশন করতে পারেননি। কয়েক দিন পর একদিন সন্ধ্যায় কামরুজ্জামান খলিফা সীমান্ত এলাকা থেকে সহযোদ্ধাদের নিয়ে রওনা হন রাজশাহী শহরের উদ্দেশে। শেষ রাতে পাকিস্তানিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাঁরা ঢুকে পড়েন শহরে। গ্রেনেড হামলা চালান শহরের বিদ্যুত্ সাবস্টেশনে। সেগুলো নির্ভুল নিশানায় পড়ে। বিকট শব্দে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

অপারেশন শেষে মুক্তিযোদ্ধারা বিভক্ত হয়ে শহর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। কামরুজ্জামান খলিফা ও তাঁর দুই সহযোদ্ধা পথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি টহলদলের সামনে পড়ে যান। টহলদলের সেনারা তাঁদের আক্রমণ করে। এ রকম পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করা ছাড়া বিকল্প থাকে না।

তবে এটা ছিল অসম যুদ্ধ। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়েও কামরুজ্জামান খলিফা ও তাঁর দুই সহযোদ্ধা বিচলিত হননি। বিপুল বিক্রমে তাঁরা আক্রমণ মোকাবিলা করেন এবং তিনজনই যুদ্ধে শহীদ হন। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের মরদেহ সেখানেই ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয় কয়েকজন তাঁদের মরদেহ সমাহিত করেন, কিন্তু ভয়ে তাঁরা সমাহিত স্থান চিহ্নিত করে রাখেননি।

মো. কামরুজ্জামান খলিফা চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন রাজশাহী সেক্টরে। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ৭ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান