বিজ্ঞাপন
default-image

মো. ইসহাক ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন নবীন সেনা। প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। ছুটি শেষ হওয়ার আগেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে চলে যান। ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পুনর্গঠন করা হলে তাঁকে তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি রাজনগর সাব-সেক্টরের অধীন গাবতলা, মনতলা, ফুলগাজী, চিথলিয়া, মুন্সিরহাটসহ কয়েকটি জায়গায় যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১ ডিসেম্বর থেকে কয়েক দিনের ব্যবধানে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর কয়েক দফা যুদ্ধ হয়। মুক্তিবাহিনী বিলোনিয়া দখল করে নিলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাঠাননগরে অবস্থান নেয়। মিত্রবাহিনী ও নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর চতুর্থ ও দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একাংশ পাঠাননগরে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করে। তখন দুই পক্ষে প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় মো. ইসহাকের গায়ে পাকিস্তানি গোলার আঘাত লাগে। গুরুতর আহত হন তিনি।

সহযোদ্ধারা মুমূর্ষু অবস্থায় মো. ইসহাককে উদ্ধার করেন। কিন্তু ফিল্ড হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান। এর আগে তিনি নিজেও হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর জীবনের শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে। মৃত্যুর আগে সহযোদ্ধাদের কাছে তাঁর অনুরোধ ছিল, তাঁকে যেন তাঁর নিজ এলাকায় কবর দেওয়া হয়। তিনি যেখানে শহীদ হন, সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই ছিল তাঁর গ্রামের বাড়ি। তখন পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। এর মধ্যেই সহযোদ্ধারা ইসহাককে তাঁর বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে মান্দারপুর গ্রামে কবর দেন। তাঁর শহীদ হওয়ার খবর তাঁর মা-বাবাকে জানানো হয় স্বাধীনতার পর।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান