বিজ্ঞাপন
default-image

মো. আবুল কাশেম ভূঁইয়া ১৯৭১ সালে ছিলেন এসএসসি পরীক্ষার্থী। টগবগে তরুণ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেননি। দেশমাতৃকার ডাকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে স্বল্প প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকেন। মে মাসের প্রথমার্ধে তিনি ছিলেন কুমিল্লার বিবিরবাজারে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মো. আবুল কাশেম ভূঁইয়া শহীদ হন।

এ যুদ্ধের বিবরণ আছে মেজর খালেদ মোশাররফের (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল) এক বয়ানে। তিনি বলেন, ‘...কুমিল্লার বিবিরবাজার (মুক্তিবাহিনীর) পজিশনের ওপর পাকিস্তানি বাহিনী প্রচণ্ড আক্রমণ করে। অনেক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে কুমিল্লা শহরের সন্নিকটে দেড় মাইল পূর্ব দিকে তারণ্যপুর শত্রুরা দখল করতে সমর্থ হয়। আমি ইপিআরের একটি কোম্পানি এবং কিছুসংখ্যক বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা দিয়ে বিবিরবাজার প্রতিরক্ষাব্যূহ আরও শক্তিশালী করি। প্রতিরক্ষা অবস্থানে শত্রুরা বারবার আক্রমণ চালাতে থাকে।

‘অবশেষে পাকিস্তানি বাহিনী একদিন সন্ধ্যার সময় অতর্কিতে এ পজিশনের ওপর ৩৯ বালুচ রেজিমেন্টের সাহায্যে গোলন্দাজ বাহিনী এবং ট্যাংকের সাহায্যে প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। প্রথমে শত্রুসেনা পূর্ব দিকে আক্রমণ চালনা করে। এই আক্রমণ আমার সেনারা নস্যাত্ করে দেয় এবং শত্রুদের অনেক লোক নিহত ও আহত হয়। এরপর শত্রুসেনারা দক্ষিণ দিক থেকে আমাদের পজিশনের ওপর পেছনে বাম পাশে ট্যাংক ও ৩৯ বালুচ রেজিমেন্টের সাহায্যে আক্রমণ চালায়। চার-পাঁচ ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ হয়। ট্যাংক ও গোলন্দাজ বাহিনীর প্রচণ্ড গোলাবর্ষণে এবং পেছন দিক থেকে আমরা ঘেরাও হওয়ার আশঙ্কায় আমাকে বাধ্য হয়ে এই অবস্থান ছাড়তে হয়।

‘এ যুদ্ধে ইপিআরের জওয়ানরা যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দিয়েছে। বিশেষ করে মনে পড়ে এক নায়েকের কথা। সে শত্রুদের গুলি করতে করতে এত উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল যে তাদের নিহতের বিপুলসংখ্যা দেখে একপর্যায়ে “জয়বাংলা” হুংকার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। সেই সময় দুর্ভাগ্যবশত তাঁর মাথায় গুলি লাগে এবং মারা যায়।

‘যুদ্ধে আমার ছয়জন সেনা মারা যায় এবং ৮-১০ জন আহত হয়। আহতদের পেছনে নিয়ে আসি। কিন্তু তাঁদের চিকিত্সার বন্দোবস্ত করতে পারিনি। এ রকম একজন আহত তরুণ ছাত্রের কথা মনে পড়ে, যাঁর পেটে গুলি লেগেছিল। কিন্তু তত্ক্ষণাত্ অপারেশন করার ব্যবস্থা না থাকায় সে মারা যায়।’

এই আহত তরুণই ছিলেন মো. আবুল কাশেম ভূঁইয়া। মুক্তিযোদ্ধারা পরে তাঁর মরদেহ সমাহিত করেন ভারতের মাটিতে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান