বিজ্ঞাপন
default-image

আনোয়ার হোসেনের মামাতো ভাই মোজাম্মেল হক (বীর প্রতীক)। তাঁরা দুজনই যোগ দেন মুক্তিবাহিনীতে। তাঁরা ছিলেন ২ নম্বর সেক্টরের গেরিলাবাহিনীর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা গ্রুপের সদস্য। এই গ্রুপের, বিশেষ করে আনোয়ার হোসেন ও মোজাম্মেল হকের ওপর দায়িত্ব পড়ে মোনায়েম খানের বাড়িতে অপারেশনের। মোনায়েম খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন। নানা কাজের জন্য তিনি ছিলেন কুখ্যাত।

মোনায়েম খানের বাড়িতে পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ সার্বক্ষণিক প্রহরায় ছিল। বাড়ির চারদিকে ছিল তল্লাশি চৌকি। আনোয়ার হোসেনের মামা আর মোজাম্মেল হকের চাচা আবদুল জব্বার কাজের সূত্রে মোনায়েম খানের বাড়িতে নিয়মিত যেতেন। তাঁর মাধ্যমে মোনায়েম খানের বাড়ির দুজন কাজের লোক শাহজাহান ও মোখলেসের সঙ্গে তাঁরা পরিচিত হন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন যে তাঁরা দুজনই মোনায়েম খানের ওপর ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। আনোয়ার হোসেন ও মোজাম্মেল হক এই সুযোগ কাজে লাগালেন। তাঁরা দেশের স্বাধীনতার লড়াই, মোনায়েম খানের মতো কট্টর পাকিস্তানি দালালদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা শাহজাহান ও মোখলেসকে বোঝান। দুজনই তাঁদের সঙ্গে একমত হন।

১৩ অক্টোবর আনোয়ার হোসেন পুঁইশাকভর্তি চটের ব্যাগের মধ্যে একটি স্টেনগান, একটি গ্রেনেড ও ফসফরাস বোমা নিয়ে যান বনানী কবরস্থানসংলগ্ন মোনায়েম খানের বাড়ির পেছনের কলাবাগানে। সেখানে সহযোদ্ধা নুরুল আমিনকে সঙ্গে নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন মোজম্মেল হক। একটু পর শাহজাহান এসে তাঁদের জানান, মোনায়েম খান ড্রয়িংরুমে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করছেন। তখন তাঁরা দুজন একসঙ্গে ক্ষিপ্রগতিতে ড্রয়িংরুমে ঢোকেন। অস্ত্র হাতে তাঁদের দেখে মোনায়েম খান ও অন্যরা চমকে ওঠেন। আনোয়ার হোসেন স্টেনগান দিয়ে ব্রাশফায়ার করেন। মোজাম্মেল হক হ্যান্ড গ্রেনেড ও ফসফরাস বোমা চার্জ করেন। এরপর শাহজাহানের সঙ্গে তাঁরা দুজন বাউন্ডারি দেয়াল টপকে পালিয়ে যান। আনোয়ার হোসেন যান ছোলমাইদ, মোজাম্মেল হক ভাটারায় তাঁর এক চাচার বাড়িতে। পরদিন খবর পান, অপারেশন সফল হয়েছে। মোনায়েম খান নিহত হয়েছেন।

মো. আনোয়ার হোসেন ১৯৭১ সালে এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মা-বাবাকে না জানিয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। আগরতলার মতিনগর ও মেলাঘরে প্রশিক্ষণ নেন। তিনি কালীগঞ্জের ইছাপুরে সরাসরি এক যুদ্ধেও অংশ নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান