বিজ্ঞাপন
default-image

কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত মিয়াবাজার। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে। গেরিলা অপারেশন করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের ওই এলাকা দিয়ে চলাচল করতে হয়। কিন্তু পাকিস্তানি ওই ক্যাম্পের কারণে তাঁদের বেশ অসুবিধা হতে থাকল। তাঁরা কয়েকবার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অ্যামবুশে পড়ল। এতে তাঁদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হলো।

মিয়াবাজার মুক্তিবাহিনীর ২ নম্বর সেক্টরের নির্ভয়পুর সাবসেক্টরের আওতাধীন এলাকা। আগস্ট মাসে সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স থেকে সেখানে নির্দেশ এল অবিলম্বে মিয়াবাজার থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী উচ্ছেদের।

নির্ভয়পুর সাবসেক্টরে মুক্তিবাহিনীর একটি দলের দলনেতা মেহবুবুর রহমান। তাঁর ওপরই দায়িত্ব পড়ল পাকিস্তানি সেনাদের মিয়াবাজার থেকে উচ্ছেদ করার। দায়িত্ব পেয়েই তিনি আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে থাকলেন।

কয়েক দিন পর মেহবুবুর রহমান তাঁর দল দিয়ে রাতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেন। ভোর রাতে অতর্কিতে আক্রমণ চালালেন পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে। কয়েক ঘণ্টার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হলো কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। আহত হলো অনেক। এই আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা এতই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল যে মিয়াবাজারের অবস্থান পরিত্যাগ করে তারা কুমিল্লায় চলে গেল।

অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ। নির্ভয়পুর সাবসেক্টরে খবর এল, পাকিস্তানি সেনারা মিয়াবাজারে আবার ক্যাম্প স্থাপন করেছে। তখন নির্ভয়পুর সাবসেক্টরের অধিনায়ক মেহবুবুর রহমান। তিনি বুঝতে পারলেন, পুনরায় ক্যাম্প স্থাপন করে পাকিস্তানি সেনারা কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রাস্তা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মেহবুব সিদ্ধান্ত নিলেন, পাকিস্তানি সেনাদের এই পরিকল্পনা যেকোনো মূল্যে নস্যাত্ করতে হবে।

১৭ অক্টোবর রাত আনুমানিক ১১টা। সহযোদ্ধাদের নিয়ে মেহবুব আক্রমণ চালালেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে। প্রায় দেড় ঘণ্টা যুদ্ধ চলল। আক্রমণে নিহত হলো দুজন পাকিস্তানি সেনা। আহত হলো পাঁচ-ছয়জন। তিন দিন পর ২০ অক্টোবর। মেহবুবুর রহমান সহযোদ্ধাদের নিয়ে আবার আক্রমণ চালালেন মিয়াবাজারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আরেকটি ঘাঁটিতে। তখন আনুমানিক ভোর চারটা। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল পাকিস্তানি সেনারা। দুই ঘণ্টার যুদ্ধে নিহত হলো ২১ জন পাকিস্তানি সেনা। আহত হলো আরও বেশি।

মেহবুবুর রহমান চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে তাঁর পদবি ছিল লেফটেন্যান্ট। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। নির্ভয়পুর সাবসেক্টরে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে তিনি ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান