বিজ্ঞাপন
default-image

হাতীবান্ধা লালমনিরহাট জেলার অন্তর্গত উপজেলা। পশ্চিম দিকে তিস্তা নদী। পাটগ্রাম থেকে রেল ও সড়কপথ চলে গেছে হাতীবান্ধার ওপর দিয়ে এবং যুক্ত হয়েছে লালমনিরহাটের সঙ্গে। হাতীবান্ধার বড়খাতা ও থানা সদরে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান। সেখানে কয়েকবার মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালিয়ে ব্যর্থ হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি মুক্তিযোদ্ধারা আবার সেখানে আক্রমণ পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০-২১ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা থানা সদর ও বড়খাতার উদ্দেশে সীমান্ত এলাকা থেকে রওনা হন। একটি দলের নেতৃত্বে আছেন মেজবাহউদ্দীন আহমেদ ফারুক। তাঁদের সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান (বীর বিক্রম)।

সেদিন ছিল ঈদ। সকাল আটটায় একযোগে তাঁরা অতর্কিতে আক্রমণ চালান। কিন্তু সময়টা আক্রমণের উপযোগী ছিল না। মুক্তিযোদ্ধারা ভেবেছিলেন, ঈদের দিন পাকিস্তানি সেনারা কিছুটা রিলাক্সড মুডে থাকবে। এই সুযোগ নিতে পারলে তাঁদের আক্রমণ সফল হবে। কিন্তু তা হয়নি। পাকিস্তানি সেনারা পুরোপুরি সতর্কাবস্থায় ছিল।

আরেকটি ঘটনা, সেদিন ক্যাম্পে পাকিস্তানি সেনা বদল হচ্ছিল। অর্থাত্ নতুন একটা দল লালমনিরহাট থেকে এসে সেখানে অবস্থান নিচ্ছিল। সেখানে যারা ছিল, তারা লালমনিরহাটে চলে যাচ্ছিল। এ রকম এক অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে আক্রমণ করেন। আকস্মিক আক্রমণে প্রথমেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দলনেতাসহ (কোম্পানি কমান্ডার) কয়েকজন নিহত হয়। এ ঘটনা ঘটে হাতীবান্ধার বড়খাতায় ১৯৭১ সালের ২০ বা ২১ নভেম্বরে। এরপর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তারা পিছু হটতে থাকে। এই সুযোগে মেজবাহউদ্দীনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বড়খাতা ঘাঁটি দখল করেন। কয়েক দিন সেখানে যুদ্ধ হয়। ২৪ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দল হাতীবান্ধা থেকে পালিয়ে যায়।

মেজবাহউদ্দীন আহমেদ ১৯৭১ সালে ব্যবসা করতেন, সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্তও ছিলেন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাডেট অফিসার হিসেবে যোগ দিয়ে কাকুলে প্রশিক্ষণ নেন। কিন্তু তাঁকে সেনাবাহিনীতে কমিশন দেওয়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতের সাহেবগঞ্জে কিছুদিন প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। পরে যুদ্ধ করেন ৬ নম্বর সেক্টরের পাটগ্রাম সাব-সেক্টরের অধীনে। বড়খাতা, পাটগ্রামসহ কয়েকটি স্থানে যুদ্ধ করেন। ৫ ডিসেম্বর লালমনিরহাট মুক্ত করার পর মেজবাহউদ্দীন তাঁর দলবল নিয়ে অগ্রসর হন রংপুরের দিকে। ১৬ ডিসেম্বর রংপুর পুলিশ লাইন দখল করে তিনি সেখানে পতাকা ওড়ান।

স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান