বিজ্ঞাপন
default-image

মীর শওকত আলী প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর আগস্ট মাস থেকে ৫ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সেক্টরের আওতাধীন ছিল সিলেটের উত্তরাংশের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের (তখন মহকুমা) সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জ উপজেলা (তখন থানা)। তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিচালনায় ৫ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য অপারেশন করেন। তাঁর সার্বিক নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি গেরিলা ও সরাসরি যুদ্ধও সংঘটিত হয়। এর মধ্যে গোবিন্দগঞ্জের সরাসরি যুদ্ধ একটি।

মীর শওকত আলীর বয়ানে (১৯৭৪) মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঘটনা জানা যাক: ‘প্রথমে আমি মেজর জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম, পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি) সঙ্গে ১ নম্বর সেক্টরে তাঁর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করি। ৩০ মার্চের পর তিনি আমার সঙ্গে আর ছিলেন না। সীমান্তের ওপারে গিয়েছিলেন। কাজেই তখন থেকে মুক্তিবাহিনীর পুরো কমান্ড আমার হাতে এসে পড়ে।

‘২ মে বিকেলে আমরা সীমান্তের ওপারে যাই। কিছুদিন পর জেনারেল (তখন কর্নেল) ওসমানী আমাকে ডেকে বললেন, সিলেট এলাকায় সেক্টর খোলা হয়নি। ওই এলাকায় অনেক ইপিআর, স্বেচ্ছাসেবক ও সেনা বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। তিনি নির্দেশ দিলেন আমাকে অবিলম্বে শিলং যেতে এবং ওখানে থেকে যুদ্ধ সংগঠন করতে।

‘সেখানে গিয়ে দেখি, আমাদের লোকজন খুব বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। না ছিল রসদপত্র, না ছিল কোনো যুদ্ধ সংগঠন। পরে আমাকে ৫ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত করা হলো। এলাকাটি ছিল বেশ দুর্গম। আমি আমার এলাকা পাঁচটি সাবসেক্টরে ভাগ করি।

‘আমাদের রণকৌশল যা হওয়া উচিত, তা-ই ছিল। গেরিলা রণকৌশলকে আমরা প্রধান অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম। যুদ্ধের নিয়ম হলো, কোনো বড় শক্তির সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পর তার সঙ্গে চিরাচরিত যুদ্ধকৌশল প্রয়োগ করলে হারতে হবে। এ স্থলে চিরাচরিত রীতি ভঙ্গ করে গেরিলাযুদ্ধ করতে হবে।

‘এ পদ্ধতিতে আমরা শত্রুর (পাকিস্তানি সেনাবাহিনী) ওপর আক্রমণ করে পালিয়ে যেতাম। অর্থাত্ রোজ এ পদ্ধতিতে আঘাত করে তাদের শক্তি কমিয়ে দেওয়া। এতে শত্রুর অনেক ক্ষতি হতো। আমাদের তেমন কিছুই হতো না।

৩ ডিসেম্বর আমরা টেংরাটিলা দখল করলাম। তারপর ছাতক ও সুনামগঞ্জ। এরপর আমরা সিলেটের দিকে ধাবিত হলাম। এ সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের কথা ঘোষিত হলো।’

মীর শওকত আলী ১৯৭১-এ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহরে। তাঁর পদবি ছিল মেজর।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান