বিজ্ঞাপন
default-image

তুষভান্ডার লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ থানার (বর্তমানে উপজেলা) অন্তর্গত। ১৯৭১ সালে এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছোট একটি ঘাঁটি। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে নভেম্বরের শেষ দিকে পাটগ্রাম, বড়খাতা ও হাতীবান্ধা মুক্ত করার পর মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যেতে থাকেন লালমনিরহাটের দিকে। মিত্রবাহিনীর সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় একটি অংশ অগ্রসর হয় লালমনিরহাটের উদ্দেশে। ছোট অংশটি যায় তুষভান্ডার মুক্ত করতে। মুক্তিযোদ্ধারা এভাবে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন দিক থেকে তুষভান্ডার আক্রমণ করার জন্য রওনা হন।

১১ জনের একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মাহতাব আলী। তিনি তাঁর দল নিয়ে সেখানে গিয়ে সবার আগে আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যান্য দল তখনো বেশ দূরে। মাহতাব আলী সরকারসহ তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ করেন। তখন তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের প্রবল বাধার সম্মুখীন হন। তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। যুদ্ধবিদ্যায় তাঁরা তেমন পারদর্শী ছিলেন না। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক অস্ত্রের গুলিতে তাঁরা একে একে শহীদ হতে থাকেন।

একপর্যায়ে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে দলের একমাত্র তিনিই জীবিত। তিনি মনোবল না হারিয়ে যুদ্ধ করতে থাকেন। তখন তিনি একটি কৌশলের আশ্রয় নেন। বারবার স্থান পরিবর্তন করে গুলি করতে থাকেন। এতে পাকিস্তানি সেনারা কিছুটা বিভ্রান্ত হয়। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের অন্য একটি দল সেখানে এসে পাকিস্তানি ঘাঁটির ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। তাঁদের সঙ্গে গ্রামবাসীও লাঠিসোঁটা নিয়ে যোগ দেন। ততক্ষণে পাকিস্তানি সেনাদেরও গোলাগুলি প্রায় শেষ হয়ে যায়। ফলে মানসিকভাবে তারা ভেঙে পড়ে। এরপর তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এ ঘটনা ঘটেছিল মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে, নভেম্বরের শেষ দিকে।

মাহতাব আলী সরকার ১৯৭১ সালে এইচএসসির শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষিকাজও করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার পর ভারতে যান। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে যুদ্ধ করেন সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টরের অধীনে। পরে পাটগ্রাম সাব-সেক্টরে। হাতীবান্ধা, কাকিনা, বড়খাতাসহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। মুক্তিবাহিনীর একটি দলের (সেকশন) দলনেতা ছিলেন তিনি।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান