বিজ্ঞাপন
default-image

মাসুদুর রহমান একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে রাতে অবস্থান নেন অমরখানায়। তিনিই এ দলের নেতৃত্বে। তাঁদের সঙ্গে আছে মিত্রবাহিনীর ৭ মারাঠা রেজিমেন্টও। তাঁরা একযোগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাবেন বলে ঠিক হলো। পরিকল্পনামতো রাত দুইটায় একযোগে তাঁরা আক্রমণ শুরু করলেন। সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনারাও তাদের সুরক্ষিত ও শক্তিশালী ঘাঁটি থেকে শুরু করল পাল্টা আক্রমণ। গোলাগুলির শব্দে চারদিক প্রকম্পিত। মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত সাহস, ক্ষিপ্রতা ও দক্ষতার সঙ্গে গুলি করে এগিয়ে যেতে থাকেন পাকিস্তানি ঘাঁটির দিকে। প্রায় দুই ঘণ্টা চলে যুদ্ধ। এরপর পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা দুর্গে ফাটল ধরে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা পশ্চাদপসরণ করতে থাকে। শেষ রাতের দিকে তারা অমরখানা থেকে পালিয়ে যায়। ভোরের আলোয় মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা অমরখানা বিওপি দখল করে সেখানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

অমরখানা পঞ্চগড় জেলার অন্তর্গত। বাংলাদেশের সর্ব উত্তরে এর অবস্থান। উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলার চাউলহাটি ও ভাটপাড়া। অমরখানার পূর্ব দিকজুড়ে প্রবাহিত তালমা নদী। অমরখানার ওপর দিয়েই তেঁতুলিয়ায় যাওয়ার সড়কপথ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে অমরখানা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এপ্রিলের শেষ দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অমরখানা দখল করে সেখানে শক্তিশালী ঘাঁটি স্থাপন করে। এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৬ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ও সহযোগী মিলিশিয়া বাহিনীর দুই কোম্পানি সেনা। আগস্ট থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অমরখানায় বেশ কয়েকবার আক্রমণ করেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সেখান থেকে বিতাড়নে ব্যর্থ হন। সেটি সম্ভব হয় ২২ নভেম্বরে পরিচালিত আক্রমণের মাধ্যমে। সেদিনের যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন মাসুদুর রহমান। নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি অস্ত্র হাতে নিজেও যুদ্ধ করেন। এ যুদ্ধে তাঁর অসাধারণ রণকৌশল ও সাহস দেখে মুক্তিযোদ্ধারা দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হন।

মাসুদুর রহমান ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৩০ মার্চ কালুরঘাটের যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন। এরপর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একাংশের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে থাকেন। বুড়িঘাট ও মহালছড়ির যুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গেই তিনি ভারতে চলে যান। পরে যোগ দেন প্রথম বাংলাদেশ ওয়ার কোর্সে। মূর্তিতে প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে মুক্তিবাহিনীর ৬ নম্বর সেক্টরের ভজনপুর সাব-সেক্টরের একটি দল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি পরে জগদলহাট, ময়দানদীঘি, বকশীগঞ্জ, বোদাসহ কয়েক জায়গায় যুদ্ধ করেন।

মাসুদুর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদ থেকে অবসর নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান