বিজ্ঞাপন
default-image

সীমান্ত এলাকায় অন্যত্র টহলে ছিলেন মনিরুজ্জামান খান। শিবিরে ফিরেই খবর পেলেন, কাশিপুরে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। এ খবর পেয়ে তিনি যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার জন্য কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হলেন সেদিকে। কাশিপুর যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত। কাশিপুরে আছে একটি সেতু। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রায়ই ওই সেতুর ওপর দিয়ে সীমান্ত এলাকায় যাতায়াত করত। ১৯৭১ সালের ২৭ জুনেও আসে একদল পাকিস্তানি সেনা। সেদিন তারা সংখ্যায় ছিল বিপুল। সেতুর ওপারে গাড়ি রেখে তারা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দিকে। সীমান্ত এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ করেন। কাশিপুরের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ চলতে থাকে।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের তাড়া খেয়ে কাশিপুরের এক জঙ্গলে লুকিয়েছিল কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। এর পাশ দিয়েই মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আসছিলেন মনিরুজ্জামান খান। ওখানে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের আক্রমণ করে। আকস্মিক আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না তাঁরা। তিনি খবর পেয়েছিলেন, পাকিস্তানি সেনারা গঙ্গানন্দপুরের দিকে পালিয়ে গেছে। ফলে তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা প্রথমে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। মনে করেন, মুক্তিযোদ্ধারাই ভুল করে তাঁদের পাকিস্তানি সেনা মনে করে আক্রমণ করেছেন। কারণ, তাঁদের ও পাকিস্তানি সেনাদের পোশাক একই রকম। পরে তাঁরা বুঝতে পারেন যে এরা পাকিস্তানি সেনা।

তখন সাহসী মনিরুজ্জামান পাল্টা গুলি করে জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে পড়েন। তিনি ছিলেন সবার সামনে। মনিরুজ্জামান অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে চলে যান বেশ আগে। আর ঠিক তখনই পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া কয়েকটি গুলি এসে লাগে তাঁর বুকে। শহীদ হন মনিরুজ্জামান খান। ঘটনার আকস্মিকতায় এবং দলনেতাকে হারিয়ে তাঁর সহযোদ্ধারা কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। এ সুযোগে সেখানে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যায়। পরে সহযোদ্ধারা তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে কাশিপুরে সমাহিত করেন।

মনিরুজ্জামান খান চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের ৪ নম্বর উইংয়ে। তিনি তখন ছিলেন নায়েক সুবেদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। ওই সময় কুষ্টিয়ার যুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা (ইপিআর) কুষ্টিয়া মোহিনী মিলে অবস্থিত পাকিস্তানি ওয়্যারলেস স্টেশনের ওপর আক্রমণ চালান। তাঁদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ১ এপ্রিল কুষ্টিয়া মুক্ত হয়। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে মনিরুজ্জামান খান তাঁর দলের সঙ্গে ভারতে চলে যান। সেখানে তাঁদের দলকে পুনর্গঠিত করার পর ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টর এলাকায় তাঁরা যুদ্ধ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ ছুটিপুর, হিজলী ও বর্নিতে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান