মকবুল আলী ইপিআরে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের ১০ নম্বর উইংয়ে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন প্রতিরোধযুদ্ধে। রৌমারী এলাকার কোদালকাটির যুদ্ধে অংশ নেন। এ যুদ্ধের বিবরণে তাঁর নাম পাওয়া যায়। রৌমারীর বেশির ভাগ এলাকা পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তাঞ্চল ছিল। কেবল কোদালকাটি অল্প কিছু সময়ের জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দখলে ছিল। ১৩ আগস্ট পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের কোদালকাটি অবস্থান থেকে বেশ কিছু গানবোট, লঞ্চ ও বার্জ নিয়ে রৌমারী দখল করার জন্য রাজীবপুরের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। মুক্তিবাহিনীর একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মকবুল আলী। কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ চলে। এরপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পিছিয়ে গিয়ে আবার কোদালকাটিতে অবস্থান নেয়। ২১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আবার গানবোট, স্টিমার, লঞ্চ নিয়ে রাজীবপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় আক্রমণ চালায়। একটানা তিন দিন যুদ্ধ চলে। এই তিন দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাঁচবার ঝটিকা আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিহত করেন।
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মুক্তিবাহিনীই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোদালকাটি অবস্থানে আক্রমণ চালায়। মূল আক্রমণে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মকবুল আলী। চূড়ান্ত আক্রমণের নির্ধারিত সময় ছিল ১ অক্টোবর। সেদিন রাত ১০টার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সব দল কোদালকাটির বিভিন্ন স্থানে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেয়। পরদিন ভোরে শুরু হয় যুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনারা কয়েকবার মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ঝটিকা আক্রমণ চালায়। কিন্তু তারা মুক্তিযোদ্ধাদের হটিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে অনেক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। ৪ অক্টোবর পাকিস্তানি অবস্থান থেকে আর কোনো গুলি আসছিল না। এ ঘটনা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবিয়ে তোলে। এ সময় দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা মকবুল আলী তাঁর দলের (সেকশন) মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নদী অতিক্রম করেন। ওপাড়ে গিয়ে তাঁরা নিশ্চিত হন যে পাকিস্তানি সেনারা কোদালকাটি থেকে পালিয়ে গেছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে কোদালকাটি মুক্ত হওয়ার খবর।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মকবুল আলী কোথায় আছেন, কী করছেন সে সম্পর্কে তাঁর পরিবারের কোনো ধারণা ছিল না। যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক মাস পর অনেকে তাঁর স্ত্রীকে বিধবার পোশাক পরার পরামর্শ দেন। তিনি তখন একমাত্র সন্তানকে নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় থেকে একপর্যায়ে বাপের বাড়ি চলে যান। যুদ্ধশেষে ডিসেম্বরের শেষ দিকে মকবুল আলী বাড়ি ফেরেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান