বিজ্ঞাপন
default-image

প্রচণ্ড যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যেতে থাকল। বেলায়েত হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে তাদের ধাওয়া করলেন। ভীতসন্ত্রস্ত সেনারা তখন পেছন ফিরে গুলি করতে করতে পিছিয়ে যেতে শুরু করল। বেলায়েত হোসেন দমে গেলেন না। তাঁর ইচ্ছা দু-একজন শত্রুসেনাকে জীবিত ধরার। সাহস ও ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এগোতে থাকলেন। কিন্তু তাঁর আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হলো না। শত্রুসেনাদের ছোড়া একটি গুলি এসে লাগল তাঁর মাথায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। কিছুক্ষণ পর নিভে গেল তাঁর জীবনপ্রদীপ। এ ঘটনা ঘটে সালদা নদীতে ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর।

সালদা নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্গত। ১৪ নভেম্বর। তখন বেলা একটার মতো হবে। পাকিস্তানি সেনাদের একটি শক্তিশালী দল সালদা নদী পুনর্দখলের জন্য মনোয়ারা গ্রামের পশ্চিম দিকে গোডাউন এলাকা হয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। ওই এলাকায় বেলায়েত হোসেন ছিলেন তাঁর দল নিয়ে। অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি সেনাদের ওপর তিনি আক্রমণ চালান। প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর তারা পালাতে থাকে। তখন বেলায়েত হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন।

২ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল) ১৯৭৪-৭৫ সালে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বেলায়েত হোসেন সম্পর্কে বলেছেন, ‘...সুবেদার বেলায়েত একটি দল নিয়ে পাক সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য গুদামঘর এলাকায় আক্রমণ চালায়। পাক সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত হয় এবং তারা পালিয়ে যায়। কিন্তু একজন পাকসেনা আড়াল থেকে সুবেদার বেলায়েতকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তার মাথায় গুলি লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চিকিত্সার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, হাসপাতালে পৌঁছার আগেই সে শাহাদাতবরণ করে। তার মতো বীর সৈনিকের শহীদ হওয়ায় আমরা সবাই মর্মাহত হয়ে পড়ি। বেলায়েতের কীর্তি এবং বিক্রমের কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সালদা নদী এলাকা দখল করা একটি দুঃসাহসী পরিকল্পনা ছিল।’

বেলায়েত হোসেন চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। মার্চ মাসের শুরু থেকে তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিদ্রোহ করে তাতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের সালদা নদী সাবসেক্টরে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান