বিজ্ঞাপন
default-image

একাত্তরে বাহার উদ্দিন রেজা ছিলেন নবম শ্রেণীর ছাত্র। ২৬ মার্চ সকালে কুমিল্লা শহরে খবর ছড়িয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে। কুমিল্লা শহরের মানুষ মিছিল করে। সেই মিছিলে বাহারও যোগ দেন। ওই রাতেই কুমিল্লা পুলিশ লাইন আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তখন দক্ষিণ চর্থা এলাকায় পালিয়ে যান বাহার। পরদিন ২৭ মার্চ ভোরে যান চৌদ্দগ্রামের নোয়াপুরে। সেখানে কয়েকজন মিলে জগন্নাথদীঘি ইপিআর ক্যাম্প আক্রমণ করে এক অবাঙালি ইপিআর সদস্যকে আটক করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ আহমেদ, পেয়ার আহমেদ, সাকী চৌধুরী, পান্না, জাকারিয়া প্রমুখ। ২৮ মার্চ সকালে চৌদ্দগ্রামের আমজাদের বাজার সেতু ও চিওড়া সেতু তাঁরা ভেঙে ফেলেন। মূলত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার জন্য সেতু ভাঙা হয়। ২৯ মার্চ চৌদ্দগ্রামের আবদুল কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁরা চৌদ্দগ্রাম থানার অস্ত্র লুট করে সেই অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধযুদ্ধ করেন।

চৌদ্দগ্রামের পতন হলে তিনি কুমিল্লার বিবির বাজার দিয়ে সোনামুড়ায় যান। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অধ্যাপক খোরশেদ আলম একটি স্লিপ দিয়ে তাঁকে মতিনগরে মেজর এ টি এম হায়দারের (বীর উত্তম) কাছে পাঠান। তাঁর অধীনে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন বাহার। এপ্রিলের শেষের দিকে বিবির বাজারে আকবর হোসেনের (বীর প্রতীক, পরে লে. কর্নেল ও বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী) নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল তাঁদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করে। তখন প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এরপর কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথবাড়ীতে মাইন বসিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্ষতি করার চেষ্টা করেন তিনি।

এর আগে মুক্তিবাহিনীর ৫ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মীর শওকত আলীর (বীর উত্তম) মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তান ও বোনকে তিনি জগন্নাথবাড়ী থেকে ভারতে নিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে ভারতের মতিনগর ও কাঁঠালিয়ায় তিনি আবার প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে গেরিলাযুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে। মেজর হায়দারের নির্দেশে বাহারসহ একদল গেরিলাযোদ্ধা কুমিল্লা শহরের আটটি স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালান। ছাতিপট্টিতে (তত্কালীন কমার্স ব্যাংক এলাকা) বোমা হামলা চালাতে গিয়ে বোমার স্প্লিন্টারে আহত হন তিনি। তাঁর বাঁ হাতের আঙুলসহ পায়ে ও শরীরে আঘাত লাগে। অপারেশনের সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জামাল, খোকন, তাহের ও সাকী। এর কিছুদিন পর ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ত্রিপুরা পরিদর্শনে আসেন। সে সময় তিনি পঙ্গু ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের দেখতে জিবি হাসপাতালে যান। সেখানে জয় বাংলা ওয়ার্ডের ৯ নম্বর বেডে বাহার উদ্দিন চিকিত্সাধীন ছিলেন। কিশোর বাহার উদ্দিনকে দেখে ইন্দিরা গান্ধী অভিভূত হন এবং তাঁর সাহসের প্রশংসা করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান