বিজ্ঞাপন
default-image

বাদশা মিয়া চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। মুক্তিযুদ্ধের আগে বিয়ে করেন। কিছুদিন পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তিনি যুদ্ধে যোগ দেন।

জাহানারা বেগম বলেন, ‘বিয়ের পরই আমার স্বামী যুদ্ধে গেল। তখন ওনার কোনো ক্ষতি হয়নি। স্বাধীনের পর নকশালদের সঙ্গে যুদ্ধে উনি আহত হয়ে মারা গেলেন। বুকে অনেক আগুন নিয়ে বেঁচে আছি। এলাকার মানুষ খেতাব পাওয়ার কথা দূরের কথা, তাঁর নামই জানে না। মনে রাখেনি তাঁর নাম—সব মুছে গেছে। তাঁর নামে যদি লক্ষ্মীপুরে কিছু করা হতো, তাহলে তাঁর আত্মা শান্তি পেত, আমিও শান্তি পেতাম।’

বাদশা মিয়া যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের গঙ্গাসাগর সাব-সেক্টরের অধীনে। পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর পুনর্গঠিত দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন ফেনীর বিলোনিয়া, সলিয়ারদীঘি, পরশুরামসহ কয়েকটি স্থানে তিনি যুদ্ধ করেন।

পরশুরাম বিলোনিয়া সীমান্তের কাছাকাছি। জেলা সদর থেকে মির্জানগর রেলপথের পূর্ব পাশে ১৯৭১ সালে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি ঘাঁটি। নভেম্বরের প্রথম দিকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিলোনিয়া ও পরশুরামে আক্রমণ করে। কয়েক দিন এখানে যুদ্ধ চলে। বাদশা মিয়া এ যুদ্ধে যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব দেখান। মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমণে পরশুরাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় বেশির ভাগ পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। ৯ বা ১০ নভেম্বর পরশুরাম মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি সেনাদের পরিত্যক্ত ঘাঁটিতে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে অসংখ্য লাশ। ধানখেত, বাংকার, খালের পানি—সব জায়গায়। যারা আহত হয়ে পালাতে চেয়েছিল, তারা পালাতে পারেনি। অসহায়ভাবে কাতরাচ্ছে বাঁচার আশায়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বেশির ভাগই পরে মারা যায়। তিন-চারজন বেঁচে থাকে। অক্ষত অবস্থায় কয়েকজনকে মুক্তিযোদ্ধারা বন্দী করেন। এ যুদ্ধের পর ফেনী এলাকায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের মনোবল একেবারে ভেঙে পড়ে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান