বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়। এ সময় মুক্তিবাহিনীর নৌ-উইংয়ে সদ্য যোগ হওয়া গানবোট ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’ যাত্রা শুরু করে খুলনা অভিমুখে। তাদের লক্ষ্য খুলনার পাকিস্তানি নৌঘাঁটি দখল করা। একটি গানবোটে আছেন ফরিদউদ্দিন আহমেদ। তিনি এই গানবোটের আরইএন-১।

৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে গানবোট দুটি আকরাম পয়েন্টে পৌঁছাল। এখানে দুই রাত অবস্থান করে। এর মধ্যে মিত্রবাহিনীর দুটি জলযানও (গানবোট আইএনএস ‘প্যানভেল’ ও প্যাট্রোল ক্রাফট ‘চিত্রাঙ্গদা’) তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। অভিযানের কমান্ডার মিত্রবাহিনীর মণীন্দ্রনাথ রায় সামন্ত (এম এন সামন্ত)। তিনি প্যানভেলের অধিনায়ক। রণতরিগুলো কোনো বাধা ছাড়াই ১০ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে সাতটায় মংলায় পৌঁছাল।

সকাল নয়টায় শুরু হলো চূড়ান্ত অভিযান। সামনে প্যানভেল, মাঝে পলাশ, শেষে পদ্মা। চিত্রাঙ্গদা মংলায় থেকে গেল। প্যানভেলের সামনে থাকার কারণ, সেটি অত্যাধুনিক ও মজবুত। বেলা সাড়ে ১১টা। এ সময় আকাশে দেখা গেল তিনটি জঙ্গি বিমান। শত্রুবিমান মনে করে মুক্তিবাহিনীর গানবোট থেকে নৌমুক্তিযোদ্ধারা বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে গুলি করতে উদ্যত হলেন। কিন্তু প্যানভেলসহ বহরের কমান্ডার এম এন সামন্ত ওয়্যারলেসে জানালেন, ওগুলো ভারতীয় বিমান। তিনি গুলি করতে বারণ করলেন।

এরপর বিমানগুলো কিছুটা নিচে নেমে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে চলে গেল। তারপর হঠাত্ ঘুরে এসে বোমাবর্ষণ করল পদ্মার ওপর। পরক্ষণেই পলাশে। ভারতীয় বিমান মুক্তিবাহিনীর রণতরিকে পাকিস্তানি রণতরি মনে করে উপর্যুপরি বোমাবর্ষণ করতে থাকে। যদিও গানবোটগুলো মুক্তি বা মিত্রবাহিনীর কি না, তা শনাক্ত করার জন্য ছাদে ১৫x১০ ফুট প্রস্থের হলুদ কাপড় বিছানো ছিল। এ সময় প্যানভেল অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। ওই জাহাজে ভারতীয় বিমান বোমাবর্ষণ করল না।

বোমার আঘাতে দুই গানবোটেই আগুন ধরে গেল। সঙ্গে সঙ্গে শহীদ হলেন ফরিদউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন। বিপদ আন্দাজ করে অনেকে আগেই গানবোট থেকে পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই অক্ষত। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যাঁরা রণতরিতে ছিলেন, তাঁরা হয় শহীদ, নয়তো গুরুতরভাবে আহত হলেন।

ঘটনার এখানেই শেষ নয়। পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়া নৌমুক্তিযোদ্ধারা সাঁতার কেটে নদীর পাড়ে পৌঁছালে অনেকে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়েন। দুই-তিনজনকে তারা হত্যা করে। বাকিদের নির্যাতনের পর জেলে পাঠায়।

ফরিদউদ্দিন আহমেদ চাকরি করতেন পাকিস্তানি নৌবাহিনীতে। কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। ১৯৭১-এর জানুয়ারি থেকে ছুটিতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যাওয়ার কিছুদিন পর মুক্তিবাহিনীর নৌ-উইংয়ে যুক্ত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান