বিজ্ঞাপন
default-image

সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। পাশাপাশি চলছে ঝোড়ো বাতাসের দাপট। এর মধ্যেই নৌকাযোগে নদী পার হলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের বেশির ভাগই ইপিআর সদস্য। একটি কোম্পানির নেতৃত্বে সুবেদার ফজলুর রহমান খন্দকার। আর তাঁদের সবার নেতৃত্বে সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান।

নদী পার হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের পার হতে হলো আরও একটি বড় খাল। খালের ওপারেই পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান। সুবেদার ফজলুর রহমান ও তাঁর সঙ্গীরা নিঃশব্দে দ্রুত জায়গামতো অবস্থান নেন। এদিকে দেখতে দেখতে ভোর হয়ে গেল। সেই আলোয় অদূরে দেখা গেল পাকিস্তানি সেনাদের। তারা কিছু টের পেল না। তাদের লক্ষ্য করে প্রথম ফায়ার ওপেন করলেন ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে আক্রমণ চালালেন। সারা দিন চলল যুদ্ধ। অব্যাহত গোলাগুলির মধ্যে ফজলুর রহমান সন্ধ্যার আগেই তাঁর দলবল নিয়ে এগিয়ে গেলেন পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের খুব কাছাকাছি। আকস্মিক এ ঘটনায় পাকিস্তানি সেনাদের একেবারে দিশেহারা দশা। মুক্তিযোদ্ধাদের ধাবমান এ দলের গতি রোধ করা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ল।

মুক্তিযোদ্ধারা তখন জোর কদমে সামনের দিকে ধাবমান। এ সময় শুরু হলো পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ থেকে তীব্র গোলাবৃষ্টি। ফজলুর রহমান খুব কষ্টে তাঁর দলকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করলেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাদের বিপুল সমরসজ্জা এবং তাদের জোরদার আক্রমণের সামনে টিকে থাকা তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ল। তার পরও তিনি ও তাঁর অন্য সহযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে যেতে লাগলেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে হঠাত্ তিনি পাকিস্তানি সেনাদের নিক্ষিপ্ত গোলার টুকরোর আঘাতে গুরুতর আহত হলেন। তার পরও তিনি লড়াই করে চললেন। কিন্তু একটু পরই নিভে গেল তাঁর জীবনপ্রদীপ। সত্যিকারের একজন বীরের মতো লড়াই করেই শহীদ হলেন তিনি।

এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরের। ঘটেছিল লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায়। সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প। তিন দিনের এ যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় পাকিস্তানি সেনাদের। মুক্তিবাহিনীর আরও ছয়জন শহীদ এবং ৩০ জন আহত হন। ফজলুর রহমান খন্দকারসহ অন্য যোদ্ধাদের সমাহিত করা হয় হাতীবান্ধা হাইস্কুল প্রাঙ্গণে।

ফজলুর রহমান খন্দকার ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন রংপুর ইপিআর উইংয়ে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে প্রথমে সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টর এবং পরে পাটগ্রাম সাব-সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান