বিজ্ঞাপন
default-image

শেষ রাতে মুক্তিযোদ্ধারা নিঃশব্দে অবস্থান নিতে শুরু করবেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান ঘিরে। তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত। একটি দলে আছেন নূরুল হক। কিছুক্ষণ পর সকাল হলো। চারদিক ক্রমে সেই আলোয় উজ্জ্বল হতে থাকে। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের দেখেও বুঝতে পারল না তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা। একটু পর সেখানে শুরু হলো প্রচণ্ড যুদ্ধ। এ ঘটনা ঘটে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৫ ডিসেম্বরে সিলেট এমসি কলেজে।

এই যুদ্ধের বিবরণ আছে মেজর (অব.) এম এ কাইয়ুম চৌধুরীর (১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন) বর্ণনায়। ওই যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। তিনি বলেন: ‘...ভোর চারটায় এমসি কলেজের টিলার ওপরে এসে আমরা শত্রুর গতিবিধি লক্ষ করছিলাম। শত্রু কিন্তু আমাদের উপস্থিতি সম্বন্ধে একটুও সজাগ ছিল না। তারা তাদের ডিফেন্সের ভেতর দিয়ে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করছিল।

‘যথেষ্ট পাঞ্জাবি সেনা একসঙ্গে দেখতে পেয়ে আমরা নিজেদের দাবিয়ে রাখতে পারছিলাম না। তাই পজিশন না নিয়েই ছয়টা মেশিনগান দিয়ে তিন দিক থেকে ফায়ার শুরু করলাম। শত্রুর মাথায় যেন বজ্র ভেঙে পড়ল। তারা পাগলের মতো এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছিল। এর ভেতরেই বেশ কিছু পাঞ্জাবি সেনা নিহত হয়। কিছু সেনা হাত তুলে সারেন্ডার করে।

‘শত্রুপক্ষে বেশ কিছু হতাহতের পর তারা আমাদের থেকে আরও উঁচু টিলায় অবস্থান নেয় এবং তাদের সব শক্তি টিলার ওপর নিয়োগ করে। এরপর আমাদের ডি ও বি কোম্পানির ওপর কয়েকটা মেশিনগান দিয়ে ফায়ার শুরু করে। আর্টিলারি ফায়ারও চলতে থাকে। এতে ডি ও বি কোম্পানির যথেষ্ট ক্ষতি সাধিত হয়। প্লাটুন কমান্ডার সুবেদার ফয়েজসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন। যাঁরা আহত হয়েছিলেন, তাঁদের আমরা পেছনে নিয়ে যাই।’

এমসি কলেজের যুদ্ধে নূরুল হক যথেষ্ট বীরত্ব ও সাহস প্রদর্শন করেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে তিনি আহত হন। তাঁর পায়ে গুলি লাগে। এতে তিনি দমে যাননি। গুলিবিদ্ধ হয়েও অনেকক্ষণ যুদ্ধ করেন। পরে সহযোদ্ধারা তাঁকে উদ্ধার করে পাঠিয়ে দেন ফিল্ড হাসপাতালে। এর আগে কামালপুর যুদ্ধেও শেলের স্প্লিন্টারের আঘাতে তিনি আহত হয়েছিলেন। ৩১ জুলাই ওই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। গুয়াহাটিতে চিকিত্সা নিয়ে পুনরায় তিনি যুদ্ধে যোগ দেন।

নূরুল হক চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। যশোরের বেনাপোলে যুদ্ধ করার পর ভারতে যান। পুনর্গঠিত হওয়ার পর যুদ্ধ করেন নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান