বিজ্ঞাপন
default-image

কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে গেল। ফেলে গেল অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও সহযোদ্ধাদের লাশ। অধিনায়কের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা সেগুলো সংগ্রহ করছেন এমন সময় হঠাত্ গুলি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নতুন একটি দল দ্রুত সেখানে এসে তাঁদের ওপর আক্রমণ করেছে। নূরুল ইসলাম, তাঁর অধিনায়ক ও কয়েকজন সহযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাদের ঘেরাওয়ে পড়লেন। তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে লাগলেন। শহীদ হলেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু বেঁচে গেলেন অধিনায়ক। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ৯ আগস্টের (মতান্তরে ৫ আগস্ট)। ঘটেছিল বর্নিতে।

বর্নি যশোরের চৌগাছা উপজেলার অন্তর্গত। বর্নিতে আছে বিওপি। ১৯৭১ সালে সেখানে ছিল ৭৫-৮০ জন পাকিস্তানি সেনা। রাজাকারও তাদের সঙ্গে ছিল। ৯ আগস্ট বয়রা সাব-সেক্টরের কমান্ডার ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদার (বীর বিক্রম, পরে কর্নেল) নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা বর্নি সীমান্ত বিওপিতে আক্রমণ করেন। কয়েক ঘণ্টা সেখানে যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের ১৪ থেকে ১৫ জন নিহত হয়। যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা তাদের সহযোদ্ধাদের লাশ ও অনেক অস্ত্রশস্ত্র ফেলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

এরপর খন্দকার নাজমুল হুদা মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রশস্ত্রগুলো সংগ্রহ করে নিজেদের ঘাঁটিতে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশ পেয়ে নূরুল ইসলামের সহযোদ্ধারা সেগুলো সংগ্রহ করে নিজেদের ঘাঁটিতে পাঠাতে থাকেন। সেখানে ছিল একটি খাল। তার পূর্ব পারে ছিলেন অধিনায়কসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের মধ্যে নূরুল ইসলামও ছিলেন। বাকি মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন খালের পশ্চিম পারে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নতুন একটি দল পেছন দিক থেকে এসে তাঁদের ওপর আক্রমণ করে। উত্ফুল্ল মুক্তিযোদ্ধারা আকস্মিক ওই আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। এতে তাঁরা চরম বিপদের মুখে পড়েন। তখন নূরুল ইসলামসহ কয়েকজন বিচলিত না হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করতে থাকেন। ওই সুযোগে তাঁর সহযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ শেখ (বীরশ্রেষ্ঠ) ও আবুল হোসেন (বীর প্রতীক) অধিনায়কসহ কয়েকজনকে খাল পার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। খালের পূর্ব পারে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলতে থাকে। ওই যুদ্ধে নূরুল ইসলামসহ চারজন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। পরে মুক্তিযোদ্ধারা নূরুল ইসলাম ও তাঁর সহযোদ্ধাদের মরদেহ উদ্ধার করে বর্নিতে সীমান্তসংলগ্ন স্থানে সমাহিত করেন।

নূরুল ইসলাম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নবীন সেনা ছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চে ছুটিতে থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে চলে যান। পরে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টরের অধীনে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান