নান্নু মিয়া যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের অধীন বয়রা সাব-সেক্টর এলাকায়। ১৯৭১ সালের আগস্টে যশোরের চৌগাছা উপজেলার অন্তর্গত সুতিপুরে একদল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য আগমন ও গতিবিধি লক্ষ করার জন্য মুক্তিবাহিনীর সুতিপুর প্রতিরক্ষার অগ্রবর্তী এলাকা গোয়ালহাটি গ্রামে একটি স্ট্যান্ডিং প্যাট্রোল পার্টি মোতায়েন করা হয়। সাত-আটজনের ক্ষুদ্র এ দলের একজন সদস্য ছিলেন নান্নু মিয়া। দলনেতা ছিলেন নূর মোহাম্মদ শেখ (বীরশ্রেষ্ঠ)। কয়েক দিন সেখানে তাঁরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু স্থানীয় বাঙালি দোসরদের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের সন্ধান পেয়ে যায়। ৫ সেপ্টেম্বর একদল পাকিস্তানি সেনা তাঁদের তিন দিক থেকে আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে। তখন তাঁরাও পাল্টা আক্রমণ করে যুদ্ধ করতে থাকেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাদের সংখ্যা ছিল তাঁদের কয়েক গুণ এবং তারা অত্যন্ত আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। সামগ্রিক পরিস্থিতি নান্নু মিয়াদের অনুকূলে ছিল না। বেশিক্ষণ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অর্থ নিশ্চিত মৃত্যু। সে জন্য পরিস্থিতি দ্রুত বিবেচনায় নিয়ে তাঁরা পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত নেন। পাল্টা গুলি করতে করতে পশ্চাদপসরণের সময় হঠাৎ নান্নু মিয়ার পিঠে শেলের কয়েকটি টুকরা এবং দু-তিনটি গুলি লাগে হাতে। সহযোদ্ধারা তাঁকে উদ্ধার করে মূল অবস্থানে আনতে সক্ষম হলেও তাঁদের অধিনায়ক নূর মোহাম্মদ শেখ সেখানেই শহীদ হন।
নান্নু মিয়া চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে যোগ দেন। আহত হওয়ার আগে গোয়ালহাটি, বর্নি, গঙ্গাধরপুর, কাশিপুর, বেলতাসহ আরও কয়েকটি জায়গায় যুদ্ধ করেন। গোয়ালহাটি-সুতিপুরের যুদ্ধে আহত হওয়ার পর প্রাথমিক চিকিত্সা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে উড়িষ্যার একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নান্নু মিয়ার স্বজনেরা ভেবেছিলেন, তিনি শহীদ হয়েছেন। চিকিত্সা শেষে যুদ্ধের প্রায় তিন মাস পর তিনি বাড়িতে আসেন। যোগ দেন আগের কর্মস্থলে। শরীরে শেলের টুকরা থেকে যাওয়ায় তাঁর শারীরিক জটিলতা কাটেনি। ১৯৮৪ সালে শারীরিক কারণে তাঁকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান