বিজ্ঞাপন
default-image

আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী রাজাকারদের ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে যান মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম। তিনি একা। পালানোর সব রাস্তাই বন্ধ। লড়াই করে বীরের মতো মরতে বা বাঁচতে হবে, অন্যথায় কাপুরুষের মতো ধরা দিতে হবে। প্রথম সিদ্ধান্তই বেছে নিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর দুর্ভাগ্য। লড়াই করে জীবন দিতে বা বাঁচতে পারলেন না। আহত অবস্থায় শেষ পর্যন্ত ধরাই পড়লেন। এ ঘটনা ঘটেছিল কয়রাডাঙ্গায়, ১৯৭১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে।

কয়রাডাঙ্গা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার অন্তর্গত। নজরুল ইসলামসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভারত থেকে গেরিলা অপারেশনে আলমডাঙ্গায় এসেছিলেন। তাঁরা বেশ কয়েকটি গেরিলা অপারেশন করেন। সেদিন তিনি এসেছিলেন নিজের গ্রামে। কিন্তু তাঁর আসার খবর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর স্থানীয় দোসররা জেনে যায়। তারা গোপনে দ্রুত খবর পৌঁছে দেয় সেখানে টহলে থাকা পাকিস্তানি সেনাদের।

খবর পেয়ে পাকিস্তানি সেনাদের টহল দল সহযোগী রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে কয়রাডাঙ্গায় চলে আসে। তাদের আসার খবর গ্রামের কেউ টের পায়নি। নজরুল ইসলাম খবর পেয়ে প্রথমে পালানোর চেষ্টা করেন। সেই চেষ্টা করতে গিয়ে দেখেন সব পথ রুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা গোটা এলাকা ঘেরাও করে এগিয়ে আসছে। তখন তিনি লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাতেও তিনি ব্যর্থ হন। তাঁর কাছে ছিল হালকা অস্ত্র। সেই অস্ত্র দিয়ে কয়েকটি গুলি ছোড়া মাত্র পাকিস্তানি সেনারা ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি করতে শুরু করে। তিনি আহত হয়ে পড়ে যান। এরপর পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে আটক করে।

পাকিস্তানি সেনারা নজরুল ইসলামের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায়। জানার চেষ্টা করে তাঁর সহযোদ্ধাদের নাম ও অবস্থান। শত নির্যাতনেও তিনি তা প্রকাশ করেননি। পরে পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে তাঁকে হত্যা করে।

নজরুল ইসলাম ১৯৭১ সালে দর্শনা কলেজের আইকম প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে যোগ দেন। কুষ্টিয়া যুদ্ধে (৩০-৩১ মার্চ) তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। কুষ্টিয়া মুক্ত করার জন্য চুয়াডাঙ্গা থেকে মুক্তিবাহিনীর (ইপিআর সদস্য) একটি দল চুয়াডাঙ্গা থেকে আলমডাঙ্গা হয়ে কুষ্টিয়া অভিমুখে যায়। তখন তাদের সঙ্গে আলমডাঙ্গার শত শত ছাত্র-জনতা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন। পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গার পতন হলে তিনি ২০ এপ্রিল ভারতে যান। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৮ নম্বর সেক্টরের বানপুর সাব-সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান