মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ২৮ বা ২৯ নভেম্বর যশোরের শার্শা উপজেলার কাগজপুকুর এলাকায় এক যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা তরিকউল্লাহ শহীদ হন। এ তথ্য দিয়েছেন তাঁর বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। আর কোনো তথ্য তিনি দিতে পারেননি। তরিকউল্লাহ কীভাবে কোন যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, এর কোনো বিবরণ পাওয়া যায়নি। তিনি যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টর এলাকায়।
মে মাসের শেষ দিকে সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে তরিকউল্লাহ মুক্তিবাহিনীর একটি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করেন। এ যুদ্ধের বিবরণ আছে সুকুমার বিশ্বাসের মুক্তিযুদ্ধে রাইফেলস ও অন্যান্য বাহিনী বইয়ে। তিনি লিখেছেন, ‘পাকিস্তানি সেনারা ২৭-২৮ মে ভোর চারটার দিকে দুটি কোম্পানি নিয়ে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ করে। উভয় পক্ষে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পাকিস্তানি সেনারা তেমন সুবিধা করতে না পেরে পেছনে সরে যায়। সকাল ছয়টায় পুনরায় পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ করে। থেমে থেমে এই সংঘর্ষ ১৪ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। পাকিস্তানি সেনাদের একটি ব্যাটালিয়নের বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন সময় এই সংঘর্ষে অংশ নেয়। এই সংঘর্ষে পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার আহত ও একজন ক্যাপ্টেনসহ ১৩০ জনের মতো নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর দুজন শহীদ ও আটজন আহত হন। এই সংঘর্ষে নায়েব সুবেদার জব্বার, হাবিলদার বেলায়েত হোসেন, হাবিলদার তরিকউল্লাহ অপূর্ব বীরত্বের পরিচয় দেন।’
তরিকউল্লাহ চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টরে। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এতে যোগ দেন। যশোর-সাতক্ষীরা অঞ্চলে প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে আশ্রয় নেন ভারতের বয়রায়। বেনাপোল ও ভোমরা সাব-সেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন তিনি। এই দুই সাব-সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধকালে অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কোনো এক যুদ্ধে তিনি শহীদ হন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান