বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার দিনক্ষণ মনে নেই। আমাদের ক্যাম্পে সিদ্ধান্ত হলো পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প আক্রমণের। সেই ক্যাম্প ছিল যশোর বা পাশের মাগুরা জেলার মধ্যে। জায়গাটার সঠিক নাম আমার এখন মনে নেই। একদিন আমরা ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা রাতে রওনা হলাম সেই ক্যাম্পের উদ্দেশে। শেষ রাতে ক্যাম্প ঘেরাও করে আক্রমণ করলাম। প্রচণ্ড যুদ্ধ হলো দুই পক্ষে। ওদের বেশ কিছু সেনা মারা গেল। আমাদের পক্ষেও কয়েকজন শহীদ ও আহত হলেন।

‘ঘণ্টা খানেক বা তারও বেশি সময় যুদ্ধ করার পর সকাল হয়ে গেল। আমরা পিছু হটে একটা আমবাগানে আশ্রয় নিই। রাতে সেই বাগানে পাকিস্তানি সেনাদের একজন এল একটা পত্র নিয়ে। সে এসেছে আমার কাছেই। পত্র পাঠিয়েছে পাকিস্তানি সেনাদের ওলদাত খান নামের এক হাবিলদার। সে আমার প্রশিক্ষক ছিল। লিখেছে, “তুমি আমার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছ, আমি তোমার ওস্তাদ। তুমি আমাদের ওপর আকস্মিক আক্রমণ করে আমাদের কয়েকজন সৈন্য মেরে ফেলেছ। তুমি গাদ্দার। তোমার হিম্মত থাকলে কাল আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে এসো।”

‘এই চিঠি পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল দুই-তিনদিন পর পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে আবার আক্রমণ চালানোর। চিঠি পাওয়ার পর সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আমরা পরদিন সকালেই আবার সেখানে আক্রমণ করি। আমাদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাদের কয়েকজন নিহত হয়। দুজন পাকিস্তানি সেনাকে আমরা জীবিত আটক করি। তাদের পরে হত্যা করা হয়। যুদ্ধ চলতে থাকে। এরপর তাদের বিমান এসে আমাদের ওপর প্রচণ্ড হামলা চালায়। তখন আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি। বিমান হামলায় এবং পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সহযোদ্ধা শহীদ হন। অনেকে আহত হন।

‘যুদ্ধের পর আমরা যারা বেঁচে যাই, তারা ভারতে চলে যাই। কিছুদিন পর আমি জানতে পারি, পাকিস্তানি সেনারা ওই স্থান থেকে ক্যাম্প গুটিয়ে নিয়েছে।’

জাকির হোসেন চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা উইংয়ের (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন) অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মনিরুজ্জামানের (বীর বিক্রম) নেতৃত্বে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর ভারতে আশ্রয় নেন। পরে ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন। চৌগাছা, ছুটিপুর, হিজলি ও বেনাপোলসহ আরও কয়েক, জায়গায় সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান